নিউইয়র্কে সম্ভাব্য বড় রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত, বার্নি-এওসির সমর্থনে তরুণ ভোটারের ঢল
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিকে কেন্দ্র করে এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পালাবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রগ্রেসিভ প্রার্থী জোহরান মামদানি এখন নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে তরুণ ও প্রগতিশীল ভোটারদের আশার প্রতীক হয়ে উঠছেন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন দুই ধাপে হয়.প্রথম ধাপে ২৪ জুন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি, যেখানে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী মনোনীত হবেন। এরপর নভেম্বরে হবে সাধারণ নির্বাচন, যেখানে ডেমোক্রেট প্রার্থী অন্য দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে লড়বেন।
তবে বাস্তবতা হলো, নিউইয়র্ক শহরের ৬৯ শতাংশ ভোটার ডেমোক্রেটিক রেজিস্টার্ড হওয়ায় সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অত্যন্ত বেশি। অর্থাৎ, প্রাইমারিতেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, এবং সেটিই প্রায়শই শেষ কথা।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রোজালিন্ড ব্যারেট বলেন,
“নিউইয়র্কের রাজনীতিতে প্রাইমারি হচ্ছে বাস্তব মেয়র নির্বাচন। নভেম্বর মাসে শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকে।”
এই মুহূর্তে মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন: অ্যান্ড্রু কুয়োমো, প্রাক্তন গভর্নর, যিনি দীর্ঘদিনের পরিচিত রাজনৈতিক মুখ এবং ব্র্যাড ল্যান্ডার, বর্তমান কম্পট্রোলার ও বর্ষীয়ান প্রগ্রেসিভ নেতা ।
তবে মামদানি হঠাৎ করেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছেন।
জানুয়ারি ২০২৫-এ চালানো “সিটি ইনসাইট” পোল অনুযায়ী কুয়োমো ছিলেন শীর্ষে (৩৯%), মামদানি ছিলেন তৃতীয় স্থানে (১৭%)।
কিন্তু জুন ২০২৫-এ WSJ এবং Guardian-প্রকাশিত নতুন জরিপে, মামদানি পৌঁছে গেছেন ৪৪%-এ, কুয়োমো রয়েছেন ৪৫%-এ, এবং ল্যান্ডার নেমে গেছেন ৯%-এ। মামদানি লাতিনো এবং যুব ভোটারদের মাঝে উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটিয়েছেন—মার্চের ২০% থেকে জুনে ৪১% সমর্থন, যেখানে কুয়োমো পড়ে গেছেন ৩৬% এ।
নিউইয়র্ক সিটি ২০২১ সাল থেকে র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। এতে ভোটাররা তাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পছন্দের প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারেন। কোনো প্রার্থী যদি প্রথম রাউন্ডে ৫০% ভোট না পান, তাহলে নিচের পছন্দগুলো পুনঃবণ্টন হয়।
এই ব্যবস্থায় মামদানির সুবিধা হচ্ছে, তিনি অনেক প্রগতিশীল ও তরুণ ভোটারের প্রথম অথবা দ্বিতীয় পছন্দ।
“যাঁরা ল্যান্ডারকে প্রথম পছন্দ দিচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই মামদানিকে দ্বিতীয় পছন্দ দিচ্ছেন,” — বলছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেমস ডেইলি।
এ কারণেই মামদানি র্যাঙ্কড ভোটিংয়ে কুয়োমোকে পেছনে ফেলতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।
জোহরান মামদানি একজন অভিবাসী পরিবারের সন্তান। জন্ম উগান্ডায়, শৈশব নিউইয়র্কেই। ২০২০ সালে অ্যাস্টোরিয়া থেকে রাজ্য অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রগ্রেসিভ আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠে পরিণত হন।
তিনি বড় কোনো করপোরেট অনুদান নেননি। তাঁর প্রচারণা চলছে ছোট অনুদান ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। তার নীতিগত অবস্থান—ভাড়ার নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন ভর্তুকি, অভিবাসী অধিকারের পক্ষে, এবং করপোরেট কর বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসেবার সম্প্রসারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজ (এওসি) — উভয়েই মামদানির পাশে দাঁড়িয়েছেন। বার্নি বলেন,
“জোহরান এমন একজন নেতা যিনি বড় কর্পোরেশন নয়, সাধারণ নিউইয়র্কারদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। এই শহরকে পরিবর্তন করতে হলে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন।”
এওসি বলেন,
“জোহরান আমাদের সময়ের সাহসী রাজনীতিক। আমরা যদি ভবিষ্যতের নিউইয়র্ক চাই, তাহলে আমাদের চাই মামদানি।”
এই সমর্থন মামদানিকে “প্রগ্রেসিভ ক্যাম্পের একমাত্র ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আগামী ২৪ জুন, মঙ্গলবার, নিউইয়র্কবাসী ভোট দেবে মেয়র প্রার্থিতার প্রথম ধাপ—ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে। এর ফলাফলে নির্ধারিত হবে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি কে হবেন নিউইয়র্কের পরবর্তী মেয়র।
এই মুহূর্তে কুয়োমো বনাম মামদানি প্রতিযোগিতা যে তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মামদানি যদি জয়ী হন, তবে সেটি হবে শুধু এক রাজনৈতিক অগ্রগতিই নয়, বরং একটি প্রজন্মগত, নীতিগত ও সাংস্কৃতিক পালাবদলের স্পষ্ট সংকেত।
তথ্যসূত্র: WSJ, গার্ডিয়ান, NY টাইমস, পলিটিকো