ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটিকে “জনগণের শহর” গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।। তিনি যে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে উঠে এসেছেন—প্রগতিশীল, অভিবাসী অধিকারভিত্তিক, ধনীদের কর বৃদ্ধি ও জনসেবা বিস্তারের পক্ষপাতী—সেই নীতিগুলোই এখন তাকে নিয়ে এসেছে বিতর্কের কেন্দ্রে।
মামদানি তার নির্বাচনী ইশতেহারে তিনটি প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
১) শহরের বাসিন্দাদের জন্য ভাড়ার হার স্থগিত (rent freeze) করা
২) বিনামূল্যে শিশু পরিচর্যা (universal childcare) চালু করা
৩) এবং এসব জনসেবা রক্ষার্থে ধনী ব্যক্তি ও কর্পোরেটদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা।
তিনি বলেন, “এই শহরের ধনী ১% বাসিন্দার সম্পদ এত বেশি, যাতে আমরা পুরো নিউইয়র্ককে বাসযোগ্য করতে পারি। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।”
তবে এই পরিকল্পনা যেমন শহরের অনেক সাধারণ নাগরিকের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে, তেমনি শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক মহলে দেখা দিয়েছে প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল সম্প্রতি নিউইয়র্ক পোস্ট-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“ধনীদের উপর অতিরিক্ত কর বসালে, তারা নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে যাবে। আমরা ইতোমধ্যেই দেখছি, অনেক নিউইয়র্কার ফ্লোরিডা, টেক্সাস, কিংবা ‘পাম বিচ’ চলে যাচ্ছেন। মামদানির প্রস্তাব এই সমস্যাকে আরও ত্বরান্বিত করবে।”
নিউইয়র্ক রাজ্যের ২০২৪ সালের আয়কর রিপোর্ট অনুসারে, শীর্ষ ৫% করদাতাই রাজ্যের আয়ের ৪২% কর দেন। তাঁদের একাংশ সরে গেলে রাজ্য কোষাগারে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে মামদানি বলছেন, এই ভয় দেখিয়ে বহু বছর ধরে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও অভিবাসীদের উন্নয়ন থামিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, নিউইয়র্কের বাজেট ঘাটতি ঘোচানোর জন্য ধনীদের “ন্যায্য অবদান” দরকার, আর সেটা করলে শহরের বাচ্চারা বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক পরিচর্যার সুযোগ পাবে, এবং বাসিন্দারা ভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্ক থেকে মুক্ত থাকবে।
তার পরিকল্পনার একটি অংশ হলো “Millionaire’s Margin Tax” নামে নতুন একটি রাজস্ব প্রস্তাব, যেখানে বছরে ১ মিলিয়নের বেশি আয় করা বাসিন্দাদের অতিরিক্ত ২.৫% ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে। এছাড়া কর্পোরেট প্রফিটের উপর একটি অতিরিক্ত “City Responsibility Levy” বসানো হবে, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মামদানির প্রচার শিবির দাবি করছে।
এই ইস্যুকে ঘিরে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোও সরব হয়েছে। Gristedes সুপারমার্কেট চেইনের মালিক জন ক্যাটসিমাটিডিস সম্প্রতি প্রকাশ্যে বলেন,
“মামদানি জিতলে, ব্যবসায়িক পরিবেশ থাকবে না। আমি হয়তো আমার সব স্টোর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।”
এদিকে প্রগ্রেসিভ ও শ্রমজীবী গোষ্ঠীগুলো মামদানির পরিকল্পনার পক্ষে জনসমর্থন বাড়ানোর জন্য সংগঠিত হচ্ছে। “Housing Justice for All” নামক একটি সংগঠন ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসে ৫০টির বেশি স্থানে প্রচারণা চালিয়েছে, যেখানে তারা মামদানির রেন্ট ফ্রিজ প্রস্তাবের পক্ষে ৩০,০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে।
নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের রাজনৈতিক কলামিস্ট মারিয়া এস্পিনোসা লিখেছেন,
“মামদানি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন, যেখানে শহরের আয় গড়ে তোলার দায়িত্ব ধনীদেরও রয়েছে। এটি অনেকের জন্য রাজনৈতিক চমক, আবার কারও জন্য অর্থনৈতিক হুমকি।”
নগরবাসীর একাংশ মামদানির এই নীতিকে ‘মহৎ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা ছোট ব্যবসা চালান, তাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। কারণ অতিরিক্ত করের প্রভাব তাদের প্রাত্যহিক খরচ ও কর্মসংস্থানে পড়তে পারে।
তবে মামদানি জোর দিয়ে বলছেন, “এই শহরটি কেবল ধনীদের জন্য নয়। এটি আমাদের সকলের শহর—যেখানে একটা শিশুও যেন বিনা পরিচর্যায় বেড়ে না ওঠে, আর কেউ যেন বাসা হারানোর ভয়ে রাতে ঘুমাতে না যায়।”
প্রাইমারি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে পোলিং এ এখন পর্যন্ত মামদানি বেশ এগিয়ে আছে এবং র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ে তার জয়ের ভালো একটা সম্ভাবনা তরি হয়েছে।এখন এই নীতিগত অবস্থানই নির্ধারণ করবে, নিউইয়র্কের ভোটাররা প্রগতিশীল এক বিপ্লবের পথে হাটবেন, নাকি বর্তমান ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখবেন।
তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান, NY টাইমস, NY পোস্ট, NY বার্ষিক কর রিপোর্ট, মামদানি টিম প্রচার ব্রিফিং