নোটিশ:
শিরোনামঃ
বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু হচ্ছে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল টার্ন টেবিল উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক সম্মান পেলেন প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু ইউরোপে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিন বিরোধী বিক্ষোভ করায় ডিটেনশনে মাহমুদ খলিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১২২ বার দেখা হয়েছে
মাহমুদ খলিল

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিবাসন আদালতের বিচারক রায় দিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন চাইলে ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র কর্মী মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে ডিটেনশন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। মাহমুদ খলিল কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং বৈধ গ্রিনকার্ডধারী। তবে গত মার্চ মাসে তাকে গ্রেফতার করে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হয়।

কী ঘটেছে?

৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। গত বছর কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম নেতৃত্বদানকারী। এই কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চ গভীর রাতে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করেন। তখন তিনি ছিলেন তার গর্ভবতী স্ত্রীর (একজন মার্কিন নাগরিক) সঙ্গে। এরপর তাকে পরিবারের কোনো সদস্য বা আইনজীবীদের না জানিয়ে দুটি ভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়।

বিচারক জ্যামি কোমানস বলেন, সরকার যে দাবি করেছে—মাহমুদের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর, সেটি “যুক্তিসঙ্গত” এবং সরকারের পক্ষে ডিটেনশন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে।

তবে আদালত আরও সময় দিয়েছে মাহমুদের আইনজীবীদের। তারা চাইলে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। এর মানে হলো, এখনই মাহমুদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না।

অপরাধহীন এক ছাত্র, তবুও ডিটেনশন

মাহমুদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ফৌজদারি অভিযোগ নেই। শুধুমাত্র মত প্রকাশ ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাহমুদের আইনজীবীরা বলেন, সরকার যেসব তথাকথিত ‘প্রমাণ’ আদালতে উপস্থাপন করেছে, তার মধ্যে ছিল কেবলমাত্র মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি চিঠি। সেখানে বলা হয়েছে, মাহমুদ কোনো আইন ভাঙেননি, কিন্তু তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘শত্রুতামূলক পরিবেশ’ তৈরি করছে।

রুবিওর ভাষায়, “তার কর্মকাণ্ড হয়তো আইনের চোখে বৈধ, কিন্তু তবুও তার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।” তিনি দাবি করেন, এই ডিটেনশন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে “ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষার জন্য”।

সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ

মাহমুদের আইনজীবীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী—মত প্রকাশের স্বাধীনতা—লঙ্ঘন করে। মানবাধিকার সংগঠন The American Civil Liberties Union (ACLU) এই রায়কে “পূর্বনির্ধারিত” বলে উল্লেখ করেছে।

ACLU বলেছে, “সরকার মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে একটি চিঠি ছাড়া আর কোনো তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেনি। তবুও এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা মত প্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট আক্রমণ।”

মাহমুদের বক্তব্য

আদালতে রায় ঘোষণার পর মাহমুদ বলেন, “এই আদালত আগেই বলেছিল ন্যায়বিচার ও আইনি প্রক্রিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ যা ঘটেছে, তাতে স্পষ্ট—এই দুইটির কোনোটিই মানা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে পরিবার থেকে এক হাজার মাইল দূরে এনে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে, শুধুমাত্র সত্য বলার কারণে।”

পরিবারের কষ্ট

মাহমুদের স্ত্রী নূর আবদাল্লা বলেন, “এই রায় আমাদের জন্য হৃদয়বিদারক। একজন মানুষকে কেবল এই কারণে বন্দি রাখা যায় না যে তিনি নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।”

ভবিষ্যৎ লড়াই অব্যাহত

মাহমুদের আইনি দল বলছে, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং তার ‘মত প্রকাশের অধিকার’ রক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।

তারা আরও জানান, মাহমুদ ইতোমধ্যে নিউ জার্সির একটি ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, তার গ্রেফতার সংবিধানবিরোধী। এই মামলায় জয়ী হলে মাহমুদের ডিটেনশন ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।

বিতর্কিত আইন এবং অতিরিক্ত অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসন মাহমুদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের একটি পুরোনো অভিবাসন আইন প্রয়োগ করেছে, যেখানে বলা আছে—কোনো বিদেশির উপস্থিতি যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে তাকে আটক বা সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও অভিযোগ তোলা হয়েছে, মাহমুদ তার গ্রিনকার্ড আবেদনে কিছু তথ্য গোপন করেছেন—যেমন বৈরুতে ব্রিটিশ দূতাবাস ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থায় কাজ করার তথ্য। তবে এই অভিযোগে কোনো নতুন প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

হোয়াইট হাউসের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি টেইলর রজার্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুবিধা যারা অপব্যবহার করেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

উপসংহার

মাহমুদ খলিলের ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিটেনশন নয়—এটি যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার, এবং মানবাধিকার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে তার মামলার রায় কী হবে, তা শুধু তার ভবিষ্যৎই নয়, মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থার ন্যায্যতাকেও প্রভাবিত করবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT