আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এসব অস্ত্র ও গুলি দিয়ে সন্ত্রাসীরা খুন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করছে। উদ্ধার অভিযান চললেও অগ্রগতি খুবই ধীর। গত ২৭ এপ্রিল পল্লবী থেকে গ্রেপ্তারকৃত দুই সন্ত্রাসীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি জুলাই মাসের সহিংস ঘটনার সময় খোয়া যাওয়া গুলির অংশ ছিল বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
একইভাবে খুলনায় গত ৩ এপ্রিল এবং নোয়াখালীর সেনবাগ ও সোনাইমুড়ীতে গত নভেম্বরে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্রসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরা পড়ে। এসব অস্ত্রে পুলিশের সাংকেতিক চিহ্ন থাকলেও দুর্বৃত্তরা রঙ পরিবর্তন বা চিহ্ন মুছে ফেলার কারণে তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, অস্ত্র উদ্ধারে বিলম্বের পেছনে বদলির প্রভাব বড় কারণ। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা অন্যত্র বদলি হওয়ায় অস্ত্র কার হাতে গেছে সে সংক্রান্ত ধারণা দুর্বল। নতুন সদস্যরা অনেক সময় এলাকাও ভালোভাবে চেনেন না, ফলে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
আইজিপি বাহারুল আলম জানান, খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি, নইলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটবে।
সারাদেশে ৪৭২টি থানায় হামলা হয়, যার মধ্যে ৯৮টি থানা ও ফাঁড়িতে আগুন ও লুটপাট চালানো হয়। খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২৯৬টি চায়না রাইফেল, ৮টি বিডি রাইফেল, ৬০টি এসএমজি, ১১টি এলএমজি, ৬৫৩টি ৯ বোর পিস্তল, ৬৫৩টি ১২ বোর শটগান, ৫৪টি চায়না পিস্তল, ১১৭টি সিঙ্গেল গ্যাস গান এবং বেশ কয়েকটি টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ও সিগন্যাল পিস্তল।
সূত্রমতে, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের সময় গণভবন থেকে এসএসএফের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অত্যাধুনিক অস্ত্র ফেলে যান। এসবের মধ্যে এসএমজি, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশ গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন গান ও সিস্টেমও ছিল।
আতঙ্কের বিষয় হলো, এসব অস্ত্র অপরাধী ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে গেছে। এতে করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ছে। পুলিশ জানায়, সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র পাচার রোধে তারা সতর্ক রয়েছে এবং শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।
জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ডিএমপিতে দায়ের হওয়া ৯৮ মামলায় এখন পর্যন্ত ১১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে, তবে অনেক অস্ত্র এখনও বেহাত। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এসব অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার সময়ের দাবি।