বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা জুলাই গণঅভ্যুত্থান। গত বছর এই মাসে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলন, শহীদের আত্মত্যাগ এবং মানুষের ঐক্য আজও জাতীয় চেতনাকে নাড়া দেয়। সেই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে মাসব্যাপী ৩৬ দিনের বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত বছরের জুলাই মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে দেশজুড়ে গড়ে ওঠে গণআন্দোলন। সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বহু তরুণ, শিশুসহ নিরীহ মানুষ। ঢাকার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয়, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই দিনগুলো স্মরণ করেই এবার ৩৬ দিনব্যাপী এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
“আমাদের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য — জুলাইয়ে দেশের মানুষ যে এক হয়েছিল, সেই অনুভূতিটা ফিরিয়ে আনা। নতুন প্রজন্মকে সেই ইতিহাস জানানো। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং খুনিদের বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করা।”
শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা। ‘জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে’ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু (চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত)। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘জুলাই শহীদ শিক্ষাবৃত্তি’ ঘোষণা।
অবৈধ সরকারের জুলুম নির্যাতন বিষয়ক পোস্টারিং কর্মসূচি।
‘Julyforever.org’ নামে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট উদ্বোধন।
এই ৩৬ দিন দেশব্যাপী স্মরণ আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, প্রজেকশন ম্যাপিং, ড্রোন শো, শহীদ পরিবারের সাক্ষাৎকার প্রকাশ এবং নানা কর্মসূচি চলবে।
প্রতিদিন থাকবে বিশেষ ভিডিও শেয়ার, শহীদদের স্মরণে গান, নাটক, গ্রাফিতি অঙ্কন এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
🔻 ১৪ জুলাই:
‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু। শহীদ পরিবারের সাক্ষাৎকার প্রচার। ডকুমেন্টারি ও ড্রোন শো।
🔻 ১৭ জুলাই:
প্রতীকী কফিন মিছিল। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ আয়োজন।
🔻 ১৮ জুলাই:
১ মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। ‘আওয়াজ উডা’ শীর্ষক স্মরণ আয়োজন।
🔻 ১৯ জুলাই:
‘গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দিবস’। দেশব্যাপী তথ্যচিত্র প্রদর্শন, সমাবেশ ও স্মরণ অনুষ্ঠান।
🔻 ২৪ জুলাই:
শিশু শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী আয়োজন। গ্রাফিক নভেল ও শিশু অ্যাকাডেমিতে শহীদ ভাস্কর্য স্থাপন।
🔻 ২৬ জুলাই:
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রসমাবেশ, মাদ্রাসার ভূমিকা নিয়ে ডকুমেন্টারি। রিকশায় গ্রাফিতি মিছিল।
🔻 ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট):
‘শোনো মহাজন’ শীর্ষক চূড়ান্ত সমাপনী অনুষ্ঠান। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। শহীদ পরিবারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ। বিজয় মিছিল, এয়ার শো এবং সাংস্কৃতিক উৎসব।
✅ ৬৪ জেলার সব উপজেলায় ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
✅ ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ শীর্ষক তথ্যচিত্র
✅ ‘জুলাই হিরোজ’ নিয়ে প্রকাশিত বই ও ছবি প্রদর্শনী
✅ অনলাইনে জুলাই স্মরণ ও আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের সম্মাননা
✅ শ্রমিক সমাবেশ, সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্যানেল ডিসকাশন
✅ শিশুদের গ্রাফিতি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও শিশু শহীদ স্মরণ
জাতির ইতিহাসের অন্যতম অধ্যায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ, ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে, এবং ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এই মাসব্যাপী বিশাল কর্মসূচি।