মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক সরাসরি সম্প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধ কেবল শুরু, মিস্টার ট্রাম্প। এখন আপনি শান্তির কথা বলছেন? আমরা এমনভাবে আপনার সঙ্গে ডিল করব, যেন আপনি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিণতি বুঝতে পারেন।” এই বক্তব্য সম্প্রচারিত হয় ইরান ইন্টারন্যাশনালের লাইভ প্রতিবেদনে। ওই উপস্থাপক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আগুন জ্বালিয়েছে এবং ইরান তাদের জবাব দিতে প্রস্তুত।
একই সময়ে ইরানের পার্লামেন্টের কট্টরপন্থী সদস্য হামিদ রাসাই এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মিলে আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় জঘন্য হামলা চালিয়েছে। এই অপরাধের কঠোর এবং জোরালো জবাব দেওয়া হবে। তারা আজ ইরানের বিরুদ্ধে যা করেছে, তার জন্য অনুশোচনা করবে।” ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে আরও জানানো হয়, এখন থেকে এই অঞ্চলে অবস্থানরত প্রত্যেক মার্কিন বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তিকে হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ধরা হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও জনগণ আর নিরাপদ নয়।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বকে জানাতে চাই, ইরানে আমাদের হামলা ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য। পারমাণবিক কার্যক্রম শেষ করা এবং সন্ত্রাসের মদদ দেওয়া এই দেশের পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করাই ছিল এই অভিযানের উদ্দেশ্য।” ট্রাম্প আরও বলেন, “ইরানকে এখনই শান্তি স্থাপন করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
হামলার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান। নেতানিয়াহু বলেন, “এটা ছিল সাহসী এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।” ট্রাম্পও পাল্টা অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি দল হিসেবে কাজ করেছে। এই ঐক্যই আমাদের সাফল্যের মূল শক্তি।”
এই পুরো ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি দ্রুত আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিকভাবে এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে নিজেদের অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।”
বিশ্বজুড়ে এই ঘটনা নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এক লাফে বেড়ে গেছে। শেয়ারবাজারেও ব্যাপক পতন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
এই মুহূর্তে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান ঘাঁটিগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলও নিজেদের আকাশসীমা এবং সামরিক স্থাপনায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি বজায় রেখেছে। বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়া এবং ইরাকে অবস্থানরত ইরানপন্থী যোদ্ধাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ইরান থেকেও নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কা করছে ইসরায়েল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে আর কোনো পক্ষই সরাসরি পিছু হটবে না। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।