মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ভয়াবহ পারমাণবিক হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত ইরান। দেশটির সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে কুদস বাহিনী, হিজবুল্লাহ ও ড্রোন স্কোয়াড—সবাই এখন পাল্টা আঘাতের জন্য তৈরি। আকাশ, সমুদ্র ও সাইবার আঘাত—তিন ফ্রন্টেই যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিয়েছে তেহরান।
‘যুদ্ধ তো মাত্র শুরু।’ এমন হুঁশিয়ারি দিয়েই পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান। মার্কিন-ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধের কালো মেঘ। এবার পাল্টা ধ্বংসযজ্ঞে নামার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে তেহরান। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও কুদস বাহিনী (IRGC) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার পর থেকেই প্রতিশোধমূলক এক বিস্তৃত ও বহুপদক্ষেপ কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্যভেদ করা হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ জানিয়েছিলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়, আমরা তাদের ঘাঁটিগুলোকে সম্পূর্ণভাবে লক্ষ্য করব” । ঘাঁটিগুলো মিনি-ব্যালিস্টিক ও ড্রোন হামলার উদ্দেশ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নির্ধারিত হচ্ছে। কুদস বাহিনী ‘Operation True Promise’ কোডনামে বড় একটি পাল্টা অভিযান প্রক্রিয়াধীন। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে Fattah (Mach-13 হাইপারসোনিক), Emad, Ghadr, Kheibar Shekan সহ অন্যান্য ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, এবং Shahed-131/136 ধরনের ‘কামিকেজ’ ড্রোন।
— ২০২৪ এপ্রিলের True Promise-1 অভিযানে ৩৫০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র একযোগে লঞ্চ করা হয়েছিল, যা ইসরায়েলকে ব্যাপক ক্ষতি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল ।
তৃতীয় পর্যায়ে সাইবার ও জ্বালানি যুদ্ধ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইরান সম্ভাব্যভাবে হরমুজ প্রণালীতে সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিশ্ববাজারে তেলের সীমিত সরবরাহের উদ্দেশ্যে সাইবার আক্রমণের পরিকল্পনা করছে ।
চতুর্থ পর্যায়ে প্রক্সি সংকট: ইরানের নিয়ন্ত্রিত হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হাউতিরা, সিরিয়া ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া ব্যবহার করে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হবে ।
পঞ্চম পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ: ইরান এখন তার মিত্র রাষ্ট্র— রাশিয়া তুরস্ক, জার্মানি, ফ্রান্স, — এর মাধ্যমে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চেষ্টার পরিকল্পনা চালাতে পারে ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা “হাইব্রিড প্রতিক্রিয়া যুদ্ধ” নামে চিহ্নিত হচ্ছে। যা আকাশ, মাটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা, সামুদ্রিক ও সাইবার পরিবেশে যুদ্ধ, আর সৈনিক-প্রক্সি হামলার সমন্বয় ঘটাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় তারা যতটা শারীরিক আঘাত করতে চান, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তৈরি করছি—বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল বিরোধী ধারা সৃষ্টি করে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মার্কিন ঘাঁটিগুলো (যেমন: কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাকি বাগদাদ, ইরিয়ান উপকূলীয় ঘাঁটি) প্রথম হামলার স্বীকার হতে পারে।
ইসরাইল লক্ষ্য করে সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর ও আইডিএফ কমান্ডওয়ালা বেসগুলোকে টার্গেট করা হবে ।
— সামরিক দিক থেকে বর্তমানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মজুদ কমে যেতে পারে (যেমন, গেল True Promise‑1–এ ৯০% ব্যবহৃত হয়েছে Fattah ও Emad)
— তেলের দাম বিশ্ববাজারে কয়েক ডলার ভারী হবে এবং গ্লোবাল সাইবার স্থিতি বিকৃত হবে।
— কূটনৈতিক সম্মেলন যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, G7 এ উত্তেজনা বাড়বে।