ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে কিছু মহলের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর কাছে সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশকে কোনওভাবে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং আমরা তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর পরিচালিত যেকোনো ধরনের সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। মুসলিমদের জান-মাল ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হলে তা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং আঞ্চলিক সম্প্রীতি এবং শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
শফিকুল আলম বলেন, “আমরা ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা বৈষম্যের অবসান ঘটায় এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা মুর্শিদাবাদে নতুন ওয়াকফ আইন নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও অসন্তোষের জেরে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রতিবাদের সময় কিছু স্থানে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়, যার ফলে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে।
এই বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনাগুলো কেবল মুর্শিদাবাদেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তা ছড়িয়ে পড়ে মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলি জেলার কিছু অংশেও। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়, ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং কিছু স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের মতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, এবং এই সম্পর্ক যাতে কোনও অপপ্রচার বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে দুই দেশকেই সজাগ থাকতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ।