সরকার সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে। এতে পূর্বের আইনের ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে।
এই অধ্যাদেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা প্রসারিত করা হয়েছে। এখন থেকে নারী ও শিশুর পাশাপাশি কোনো ছেলে শিশুর মুখ বা পায়ুপথে সংঘটিত যৌনকর্ম (বলাৎকার) ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া, বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন নতুন অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে।
৯(খ) ধারার সংযোজন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি দৈহিক বলপ্রয়োগ ছাড়া বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ১৬ বছরের বেশি বয়সের নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের মধ্যে আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে, তবে তিনি সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অধ্যাদেশে মিথ্যা মামলার অপব্যবহার রোধে ১৭(৩) উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল এখন মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিতে পারবেন।
প্রয়োজনে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি বাদীকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
১. ধর্ষণের মামলা তদন্তের সময়সীমা
পূর্বে তদন্তের সময়সীমা ৬০ কার্যদিবস ছিল, যা ৩০ কার্যদিবস করা হয়েছে।
প্রয়োজনে অতিরিক্ত ১৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া যাবে।
হাতেনাতে ধরা পড়লে তদন্ত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে।
২. বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুত সম্পন্নকরণ
পূর্বে বিচার সম্পন্নের সময়সীমা ছিল ১৮০ কার্যদিবস।
এটি পরিবর্তন করে ৯০ কার্যদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন ২৬(ক) ধারা অনুযায়ী, সরকার প্রত্যেক জেলায় ও মহানগরে শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।
ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার দায়িত্ব জেলা ও দায়রা জজদের মধ্য থেকে বিচারকরা পালন করবেন।
নতুন ৩৫ ধারা সংযোজনের মাধ্যমে যৌতুক সংক্রান্ত মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বাইরে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচারযোগ্য করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ বিদ্যমান আইনের বৈষম্য দূর করে, বিচারের গতি বাড়িয়ে এবং মিথ্যা মামলা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। এটি নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।