হাইকোর্ট নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী পানিকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি), বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আইনজীবীরা এই রায়কে যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন।
আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির অধিকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছেন।
আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক স্থান যেমন—আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, বাজার, বিমানবন্দরসহ অন্যান্য স্থানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যে পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৬ সালের মধ্যে সকল পাবলিক স্থানে নিরাপদ বিনামূল্যে পানীয় জল সরবরাহের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের প্রতিবেদন সরকারকে আদালতে দাখিল করতে হবে। এই রায়টি একটি চলমান আদেশ হিসেবে কার্যকর থাকবে।
হাইকোর্টের ঘোষিত তুরাগ নদী, সোনারগাঁও এবং হাতিরঝিল সংক্রান্ত রায়ের নির্দেশনাগুলোও এই রায়ের আওতাভুক্ত হবে। দেশের সমস্ত পানির উৎস সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পানির স্তর না কমে, পানি দূষিত না হয় বা অনিরাপদ হয়ে না পড়ে।
নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী পানি নিশ্চিত করতে ২০২০ সালে হাইকোর্ট একটি সুমোটো রুল জারি করেছিল। এতে প্রশ্ন তোলা হয়, নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি না এবং এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা যায় কি না। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর আজ আদালত এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করলেন।
এই মামলার শুনানিতে এমিক্যাস কিউরি হিসেবে কয়েকজন আইনজীবী নিযুক্ত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোর্শেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং মানবাধিকার সংগঠন বেলার পক্ষে মিনহাজুল ইসলাম।
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব এই রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই রায় বাস্তবায়িত হলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে এবং পানিবাহিত রোগ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।”
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মঞ্জুর আলম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. ওবায়দুর রহমান (তারেক), সোয়েব মাহমুদ ও আবুল হাসান।