আজ ১৭ রমজান, সেই ঐতিহাসিক দিন, যেদিন দ্বিতীয় হিজরিতে সংঘটিত হয়েছিল বদর যুদ্ধ—ইসলামের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। আল্লাহ এই যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের বিজয়ী করে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। কোরআনে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ বা সত্য-মিথ্যার বিভাজনের দিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
যুদ্ধের পটভূমি
রাসুলুল্লাহ (সা.) সংবাদ পেয়েছিলেন যে, আবু সুফিয়ান নেতৃত্বাধীন কুরাইশদের একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছে। মুসলমানরা এই কাফেলা আটকানোর উদ্দেশ্যে বের হয়, কারণ কুরাইশরা ইতোমধ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল এবং তাদের মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাত্র ৩১০ জন সাহাবি নিয়ে বদরের দিকে রওনা হন, যাদের সঙ্গে ছিল মাত্র দুটি ঘোড়া ও ৭০টি উট।
অন্যদিকে, আবু সুফিয়ান মুসলমানদের উপস্থিতির খবর পেয়ে দ্রুত পথ পরিবর্তন করে নিরাপদে পালিয়ে যান। তবে কুরাইশরা ইতোমধ্যে ১,০০০ সৈন্য, ১০০টি ঘোড়া ও ৭০০ উটসহ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বদর দিবস বদরের প্রান্তরে যুদ্ধ
মুসলমানরা বদর কূপের কাছে অবস্থান নেয় এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের আগে সাহাবিদের কাতার সজ্জিত করেন এবং আল্লাহর সাহায্যের জন্য দোয়া করেন। তিনি সাহাবিদের জান্নাতের সুসংবাদ দেন এবং ধৈর্যসহকারে লড়াই করতে বলেন।
যুদ্ধ শুরু হলে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শত্রুপক্ষের দিকে এক মুঠো মাটি নিক্ষেপ করেন, যা তাদের চোখে বিদ্ধ হয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। মুসলমানরা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং শত্রুপক্ষকে পরাজিত করে। এই যুদ্ধে কুরাইশদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তাদের প্রধান নেতা আবু জাহল, শায়বা, উতবা ও অলিদ ইবন উতবা।
বিজয়ের তাৎপর্য
বদর যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য ঈমানের বিজয়ের প্রতীক। অল্পসংখ্যক, দুর্বল অস্ত্রসজ্জিত মুসলিম বাহিনী বিশাল ও সুসজ্জিত কুরাইশ বাহিনীকে পরাজিত করেছিল, যা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের নিদর্শন। এটি প্রমাণ করে, ঈমান ও সত্যের পথে অবিচল থাকলে যে কোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব।
রমজান শুধু সিয়ামের মাসই নয়, বরং এটি ঈমানের বিজয়ের মাসও। বদর যুদ্ধ , বদর দিবস আমাদের শেখায়, আল্লাহর ওপর আস্থা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও: