পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত মানুষের একটি হলো গাজার বাসিন্দারা। দিনের পর দিন অবরুদ্ধ হয়ে আছে তারা। বোমা, ক্ষুধা আর অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের জীবন। এই অবরোধ ভাঙতে এবং গাজার শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আবার রওনা দিয়েছে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’। রোববার (১৩ জুলাই) ইতালির সিরাকুসা বন্দর থেকে তারা ‘হান্দালা’ নামের একটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
এই ‘হান্দালা’ শুধু একটা নাম নয়, একটা প্রতীক। ছোট্ট এক ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি, যে পিঠ ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে। তার নাম হান্দালা। যতদিন সে নিজের দেশ ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে না পারবে, ততদিন সে বড় হবে না। এমনটাই বলেছিলেন এই চরিত্রের স্রষ্টা নাজি আল-আলি। সেই ছবিটিই এবার আঁকা হয়েছে জাহাজের গায়ে।
এর আগে গত ৬ জুন একই সংগঠন ‘মাদলিন’ নামের আরেকটি জাহাজ নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। সেই জাহাজে ছিল খাবার, ওষুধ আর মানবতার বার্তা। কিন্তু তিন দিন পরই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি বাহিনী সেটি জব্দ করে। ১২ জন নিরস্ত্র কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। তবু দমে যায়নি ফ্রিডম ফ্লোটিলা। এবার নতুন জাহাজ, নতুন উদ্যম আর আগের চেয়েও বেশি সাহস নিয়ে আবার রওনা দিল তারা।
এই অভিযানে কতজন আছেন, তা ঠিক করে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ জন মানবাধিকারকর্মী আছেন। এদের মধ্যে ফ্রান্সের একটি বামপন্থী দলেরও দুইজন রয়েছেন। তারা সবাই নিজের জীবন ঝুঁকিতে নিয়ে গাজার শিশুদের জন্য খাবার, ওষুধ এবং ভালোবাসা নিয়ে যাচ্ছেন।
সংগঠনটি জানায়, ‘আমরা জানি, আবারও বাধা আসবে। তবু গাজার অবরুদ্ধ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তাদের কাছে ত্রাণ নয়, ভালোবাসা পৌঁছে দিতে চাই। জানাতে চাই, এই পৃথিবী তোমাদের ভুলে যায়নি।’
বিশ্বের যে কেউ চাইলে এই ‘হান্দালা’র যাত্রাপথ সরাসরি লাইভ ট্র্যাক করতে পারবেন। এর জন্য ভিজিট করতে হবে 👉 এই লিঙ্কে।
সেখানেই দেখা যাবে, এই সাহসী মানবাধিকারকর্মীদের জাহাজ এখন কোথায়।
গত দুই বছর ধরে এই ‘হান্দালা’ জাহাজ ইউরোপের নানা বন্দরে ঘুরে ঘুরে মানুষকে জানিয়ে এসেছে গাজার দুঃখের কথা। আয়োজন করেছে ছবি প্রদর্শনী, আলোচনা আর সংহতির অনুষ্ঠান। সবার উদ্দেশ্য একটাই—গাজার শিশুরা যেন আর না কাঁদে।
এই ‘মাদলিন’ আর ‘হান্দালা’ নামগুলোও খুব অর্থবহ। ‘মাদলিন’ ছিল গাজার একমাত্র নারী জেলের নাম। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবার বদলে নেমেছিলেন সাগরে। গড়েছিলেন নিজের ছোট ব্যবসা। তার নামেই প্রথম জাহাজের নামকরণ। আর ‘হান্দালা’ সেই ছোট্ট পিঠ ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা বালক। এই দুটি নামেই এখন গাজার জন্য প্রতিবাদের প্রতীক।
বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা এই মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসরায়েল যতই বাধা দিক, আমরা থামব না। গাজার শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য লড়াই চলবেই।’