জার্মানির কঠোর অভিবাসন নীতিতে আফগান শরণার্থীদের অনিশ্চয়তার অন্ধকার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
সড়ক সংস্কারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ ভোলা বরিশাল সেতুর দাবিতে ইবিতে মানববন্ধন মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা আদর্শিক নেতৃত্বই জাতিকে এগিয়ে নেয়—আফগানিস্তানের উন্নয়ন তার প্রমাণ: মামুনুল হক নোয়াখালীতে তাহাজ্জুদের সময় ১২ বছরের মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু শেষ হলো কুবির পঞ্চম ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন ভারত অনুমতি না দেওয়ায় বুড়িমারীতে ভুটানের ট্রানজিট পণ্য আটকে অরুণাচলে মসজিদে ঢুকে ইমামকে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলাতে চাপ গেজেট বঞ্চনার প্রতিবাদে ইবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘The Voice of JKKNIU’-এর গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠিত

জার্মানির কঠোর অভিবাসন নীতিতে আফগান শরণার্থীদের অনিশ্চয়তার অন্ধকার

সালমান বক্স, ইউরোপ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫
  • ১৩১ বার দেখা হয়েছে

ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানি তাদের অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর করার পথে দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, জার্মান সরকার আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার পরিকল্পনা করছে। এ আলোচনা প্রধানত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত আফগান অভিবাসীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্য নিয়ে করা হবে।

জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ট সম্প্রতি এক বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে আলোচনার পরিবর্তে সরাসরি তালেবান সরকারের সঙ্গে কথা বলাই কার্যকর সমাধান। তার মতে, এটি অভিবাসন সমস্যার দ্রুত ও সঠিক সমাধান দিতে সাহায্য করবে।

এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। কারণ, যুদ্ধ, সহিংসতা ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে তারা ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন হঠাৎ করে তারা নিজেরাই এমন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছেন, যেখানে নিজেদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ।

৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মজিব রাজায়ী, যিনি ২০২৪ সালের মার্চে সাইপ্রাস থেকে আরও একশো আশ্রয়প্রার্থীর সঙ্গে জার্মানিতে এসেছিলেন, রয়টার্সকে জানান, তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরেই ক্লান্ত। ২০২২ সাল থেকে বৈধ অবস্থানের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনও পর্যন্ত কোনো আবাসিক অনুমতি বা কাজের সুযোগ পাইনি।”

মজিবের জন্য জার্মানি ছিল নতুন জীবনের শুরু করার আশ্রয়স্থল। কিন্তু আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। এই প্রত্যাখ্যাতির পর থেকে তার অবস্থা আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, তখন তার কণ্ঠে এক ভয় ও আতঙ্ক স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে ফিরতে পারবো না। আমার কাছে দেশটি এখনো নিরাপদ মনে হয় না। সেখানে ফিরে গেলে আমার জীবন বিপন্ন হবে।”

জার্মান সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শরণার্থী আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আন্তর্জাতিক শরণার্থী সনদ অনুযায়ী, কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে এমন দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না যেখানে তার জীবন বা নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। কিন্তু আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও তালেবান শাসনের অধীনে বহু মানুষের জীবনের ওপর যে হুমকি রয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিলে এই নীতির সঙ্গে জার্মান সরকারের সিদ্ধান্তের সাংঘর্ষিকতা দেখা দেয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেসব অপরাধীদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে, তাদের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ নিরীহ আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে এমন কঠোর নীতি যে অসুবিধার সৃষ্টি করবে, তা নিশ্চিত। এ পরিস্থিতি তাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়াবে এবং ইউরোপীয় সমাজেও নানান বিতর্কের সৃষ্টি করবে।

এই সংকটের মধ্যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জার্মান সরকারকে আবেদন জানিয়েছে, যেন তারা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে নিরীহ ও শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করেন। পাশাপাশি, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যথাযথ বসবাস, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কঠিন বাস্তবতা সামলাতে জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো নানা নতুন নীতি গ্রহণ করলেও, মানবাধিকারের মৌলিক নীতি মেনে চলা কতটা সম্ভব হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT