গাজায় প্রতিদিনই যেন একেকটা গণকবরে পরিণত হচ্ছে। এই শুক্রবার, ২০ জুনেও, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা ও গুলিতে অন্তত ৮২ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ছিলেন এমন মানুষ, যারা শুধুই একটু খাবারের আশায় সহায়তা কেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন।
এ এক চলমান গণহত্যা—যেখানে ক্ষুধা, দাহ, আর মৃত্যু মিলেমিশে এক ভয়াবহ চিত্র তৈরি করছে। বিশ্বের চোখের সামনে প্রকাশ্যে এই মানবিক বিপর্যয় ঘটে চললেও, তা থামাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
আল-জাজিরার বরাতে জানা গেছে, শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৭ জন, যাদের মধ্যে ২৩ জন সহায়তা কেন্দ্রে খাবারের অপেক্ষায় ছিলেন। গাজা সিটির আশপাশে নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। দক্ষিণ গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২২ জন, যাদের অর্ধেকই সহায়তা প্রত্যাশী ছিলেন।
এই সংখ্যা শুধু শুক্রদিনের। অথচ গত ২৭ মে থেকে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (GHF) সহায়তা বিতরণ শুরুর পর থেকেই একের পর এক হামলায় এমন সহায়তা কেন্দ্রে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৪০৯ জন মানুষ, আহত হয়েছেন অন্তত ৩২০০ জন।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ শুক্রবার জানিয়েছে, গাজা আজ এক ‘মানবসৃষ্ট খরায়’ ভুগছে। ধ্বংস হয়ে গেছে পানি সরবরাহের প্রায় সব অবকাঠামো। “শিশুরা তৃষ্ণায় মরতে শুরু করবে,” বলেন ইউনিসেফ মুখপাত্র জেমস এল্ডার। বর্তমানে মাত্র ৪০ শতাংশ পানি উৎপাদন কেন্দ্র কার্যকর অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, “সহায়তা কেন্দ্রে কখন খাবার বিতরণ হচ্ছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই, কারণ ইন্টারনেট বন্ধ। কখনো ভুল তথ্য ছড়ায়, কখনো বোমা পড়ে। মানুষ যায়—কারণ ক্ষুধার কাছে মৃত্যুও গৌণ।”
এল্ডার জানান, সম্প্রতি এক শিশুর গল্প শোনেন তিনি—যে শুধু খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু একটি ট্যাঙ্ক শেলের আঘাতে আহত হয়ে মারা যায়।
GHF, যে সংস্থা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় গঠিত, তাদের “ব্যর্থতা” নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি সংস্থাটিই দাবি করেছিল, তারা “ঘটনাবিহীনভাবে” তিনটি সাইটে ৩০ লাখ খাবার বিতরণ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা অন্য কিছু বলে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান শুক্রবার বলেন, “ইসরায়েলের এই উন্মাদনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।” তিনি জানান, “ইসরায়েল আজ নিজেদের হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছে, অথচ গাজায় ওরা ইতিমধ্যে ৭০০-র বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।”
শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে এই নৃশংসতা বোঝা যায় না। ক্ষুধার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শিশু, মায়ের কোলের সন্তান, তৃষ্ণায় জর্জর মানুষ—তাদের ওপর যখন বোমা পড়ে, সেটা নিছক গণহত্যাকে যেন ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্ব যে মুখ ফিরিয়ে আছে, সেই দৃষ্টিই যেন এই মৃত্যুমিছিলকে দীর্ঘতর করছে।