আজ সোমবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সরকারের কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ছয় মাস পার করা ড. ইউনূস জানান, তিনি কোনো গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলেন না, বরং সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তখনও চিন্তিত ছিলাম না এবং এখনো নই।” সরকার পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার প্রথম কাজ ছিল ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে পুনর্গঠনের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করা।” তিনি আরও বলেন, সরকার গঠনের পরপরই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং সেই লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক আস্থা
ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান সরকার দেশ-বিদেশে আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা অর্থনৈতিক খাত সহজ করেছি, বিদেশি আস্থা অর্জন করেছি এবং বিভিন্ন দেশ আমাদের সমর্থন জানিয়েছে।” তাঁর মতে, সরকারের কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সমালোচনা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “অপরাধের পরিমাণ আগের মতোই আছে, বাড়েনি।” যদিও বিবিসির প্রতিবেদনে পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অপরাধ কিছুটা বেড়েছে, প্রধান উপদেষ্টা একে অস্বীকার করেন না, তবে তিনি মনে করেন, “পুলিশ বাহিনীকে সময় দিতে হবে, তারা ধীরে ধীরে সঠিক পথে আসছে।”
তিনি আরও বলেন, “গণপিটুনি ও দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলার মতো ঘটনা বন্ধে সরকার কাজ করছে।” অনলাইনে মামলা করার সুযোগ সহজ করা হয়েছে যাতে জনগণ হয়রানি এড়াতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, পুলিশের আস্থা ফিরে পেতে আরও সময় লাগবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের সম্পর্ক এখনও সুদৃঢ় রয়েছে এবং সরকার নিরপেক্ষভাবেই কাজ করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও, ড. ইউনূস বলেন, “এটি তার ব্যক্তিগত মতামত। সরকার তার কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গেও কথা বলেন এবং বলেন, “যারা রাজনীতি করতে চায়, তারা স্বেচ্ছায় সরকার ছেড়ে চলে গেছে। সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায়নি।”
সেনাবাহিনীর সহযোগিতা
সেনাবাহিনী সরকারের পাশে রয়েছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “প্রথম দিন থেকেই সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পেয়েছি এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।”
নির্বাচন ও সংস্কার পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেন যে, এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা সংস্কারের জন্য কাজ করছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিচ্ছি। একমত হলে একটি চুক্তি বা চার্টার তৈরি করা হবে, যার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে।”
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস তার সরকারের সফলতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা রাতারাতি পরিবর্তন আনতে পারিনি, তবে সঠিক পথে এগোচ্ছি।” বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি আশাবাদী এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ও কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান