আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ‘হিজাব র্যালি’ আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ‘প্রোটেস্ট এগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া-ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে র্যালিটি অনুষ্ঠিত হয়।
র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি হয়ে রাসেল টাওয়ার ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হিজাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা সবক্ষেত্রে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলি, কিন্তু যখন হিজাবের প্রসঙ্গ আসে, তখন এই স্বাধীনতাকে সম্মান করা হয় না। হিজাব আমাদের অধিকার। আমাদের কাজ দিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করুন, পোশাক দিয়ে নয়।”
আয়োজক সংগঠন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন খালেদ বলেন, “ফ্যাসিবাদের সময়ে যারা হিজাব বা নিকাব পরিধান করেছেন, তারা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। দাড়ি-টুপি পরিধানকারীরাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলো এসবকে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।”
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা হিজাব এবং ধর্মীয় পোশাকের প্রতি বৈষম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম হিজাব নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী র্যালি আয়োজন করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে অংশ নেন, যেখানে লেখা ছিল “হিজাব আমার অধিকার”, “পোশাকে নয়, কর্মে বিচার করুন” ইত্যাদি স্লোগান। নারী শিক্ষার্থীরা জানান, হিজাব পরা শুধু ধর্মীয় অনুশাসন নয়, এটি তাদের আত্মপরিচয়ের অংশ। তারা চান সমাজ হিজাবকে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুক।
এই র্যালিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ একে স্বাধীন মতপ্রকাশের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেছেন, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, একাডেমিক পরিবেশে ধর্মীয় পোশাক নিয়ে এ ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।
তবে আয়োজকরা বারবারই জোর দেন, এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি ছিল পোশাকের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার পক্ষের একটি শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্ত চিন্তার জায়গা, তাই এখানে সব ধরনের মত ও বিশ্বাসের চর্চার সুযোগ থাকা উচিত।
এই র্যালির মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে—সব নাগরিকের পোশাক পরার অধিকার রয়েছে এবং সেটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে স্বীকৃত হওয়া জরুরি।
Leave a Reply