লোকপ্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
পাবলিক প্লেসে ধূমপানের শাস্তি কঠোর, জরিমানা সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ঢাকায় খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক প্রতিনিধি দল; ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ বহু দেশ ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জানাজায় বিদায় নিলেন খালেদা জিয়া, সংসদ ভবন এলাকায় জনসমুদ্র খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে মানিক মিয়া এভিনিউতে এক ব্যক্তির মৃত্যু খালেদা জিয়ার কফিন কাঁধে তুললেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী তারেক রহমানকে সহমর্মিতা পাকিস্তানের স্পিকারের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার দাফন, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে রাজসিক বিদায় ডিআইইউ মডেল ইউনাইটেড নেশন ২০২৫-এ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় সাফল্য লোকপ্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ মায়ের জন্য দোয়া ও ক্ষমা চাইলেন তারেক রহমান

লোকপ্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ

শারাফাত হোসাইন, কুবি প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১৮ বার দেখা হয়েছে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী সংগঠন ‘লোক প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশন’–এর নির্বাচনকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পছন্দের প্রার্থীকে সুবিধা দিতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে হঠাৎ নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ও প্রশ্নবিদ্ধ।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরে ২৮ ডিসেম্বর আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই তারিখ ও সময় পুনরায় নিশ্চিত করা হয়। তবে কোনো পূর্ব ঘোষণা বা লিখিত কারণ দর্শানো ছাড়াই ২৯ ডিসেম্বর হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত করে তা আগামী ৬ জানুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

নির্বাচনের আগের দিন, অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর সকালে কয়েকজন পদপ্রার্থী প্রতি ব্যাচ থেকে দুইজন করে শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংযুক্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। ওই স্মারকলিপিতে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপি পাওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোছা: শামসুন্নাহার, নির্বাচন কমিশনার সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন এবং নির্বাচন কমিশনার সহকারী অধ্যাপক মো. হাসান শাহরিয়ার বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

তবে লোকপ্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্রে নির্বাচনের সময়সূচি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত রয়েছে। গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৩-এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে অনুচ্ছেদ ৬-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের গঠন সংক্রান্ত (গ) ধারায় উল্লেখ আছে, কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ এক বছর—জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যা ১৫ ডিসেম্বর শেষ বলে গণ্য হবে। এই সময়ের মধ্যেই বার্ষিক কার্যবিবরণী ও আয়-ব্যয়ের হিসাব বিভাগে জমা দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গঠনতন্ত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো অনিবার্য কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্ভব না হলে বিষয়টি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একাডেমিক কমিটির কোনো সভা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন এককভাবে তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গঠনতন্ত্রের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ ছাড়া একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আরাফাত আমিন রাফিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, তাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন পদপ্রার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে, নির্বাচন না পেছানোর দাবিতে কয়েকজন পদপ্রার্থীর দেওয়া আবেদন গ্রহণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনে এক প্রার্থীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী বলেন,
“আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন হঠাৎ জানতে পারি কিছু প্রার্থী পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে স্মারকলিপি দিয়েছে। আমরা বিভাগে গিয়ে বিষয়টি জানাতে চাইলে আমাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। পরে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলে তা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় এবং বলা হয়—নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬ জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে, আমরা অংশগ্রহণ করি বা না করি।”

এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল আরাফাত আমিন রাফি বলেন,
“আসলে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। কারণ একেকজন একেক কথা বলে। মিথ্যা কথা বলতে আমার ভালো লাগে না।”

নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসান শাহরিয়ার বলেন,
“আমি আসলে এই বিষয়ে কথা না বলাই ভালো মনে করছি। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলুন।”

নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন বলেন,
“আমি গঠনতন্ত্র দেখি নাই। দেখতে হবে—এমন কিছু আছে কিনা। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের আপত্তি রয়েছে, তারা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোছা: শামসুন্নাহারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহান তালুকদার বলেন,
“আমাদের সময় প্রার্থীকে সশরীরে এসে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং একটির বেশি মনোনয়ন ফর্ম দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন,
“আমাদের শেষ তিনটি নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ বছর কী কারণে নির্বাচন পেছানো হয়েছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনাররাই ভালো বলতে পারবেন।”

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখিয়েছে, যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রসংগঠনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT