দেশে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দুইটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট XFG এবং XFC শনাক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে এই নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের জন্য এখনো আলাদা করে কোনো টিকা দেশে আসেনি। আগের মজুদে থাকা প্রায় ৩২ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হতে আর বেশি সময় বাকি নেই।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে জানা গেছে, গত মে মাসে ১ হাজার ৪০৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। সংক্রমণের এই হার বাড়লেও মানুষের মধ্যে তেমন একটা সচেতনতা বা টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। লক্ষণগুলো সাধারণ সর্দি, জ্বর বা গলা ব্যথার মতো হওয়ায় অনেকেই টেস্ট করাচ্ছেন না। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। করোনার এই দুইটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট XFG ও XFC-এর জন্য এখনো দেশে কোনো টিকা আনা হয়নি। আগের টিকাগুলো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্য কার্যকর হলেও নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টে কতটা কাজ করবে তা নিশ্চিত নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) বিভাগের লাইন ডিরেক্টর হালিমুর রশিদ জানিয়েছেন, দেশের মজুদে ৩২ লাখ ডোজ টিকা আছে। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য এখনো কোনো আলাদা টিকা আসেনি। তিনি বলেন, শিগগিরই টিকা কমিটি গঠন করে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য টিকা আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
টিকা নেওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহও একেবারেই কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৪৩ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৫ জন, বুস্টার ডোজ ১৬ জন এবং চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন ১৫ জন।
হালিমুর রশিদ বলেন, টিকা নিয়ে নানা গুজবের কারণে মানুষ টিকা নিতে চাইছে না। অথচ এসব গুজবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনি জানান, নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে যেকেউ সহজেই টিকা নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেন, সম্মুখসারির কর্মী, ষাটোর্ধ্ব নাগরিক, দীর্ঘমেয়াদী রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি, যারা ইতিমধ্যে ছয় মাস আগে শেষ ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদেরও নতুন করে ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। পরীক্ষা করতে আসা মানুষের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেশি। সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় হাসপাতালগুলোতে করোনা শনাক্তকরণ কিট পাঠানো হচ্ছে এবং শয্যাও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আগে থেকেই সতর্কতা ও প্রস্তুতি না নিলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা ইয়াসমিন জানান, নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকা জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ, সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার দুই-ই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর তাই সংক্রমণ শ্লথ গতিতেই হোক কিংবা বেশি, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।