সিলেটের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চালু হতে যাচ্ছে কার্গো ফ্লাইট। এতে করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য সরাসরি ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্স-রে মেশিন ও প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনের কাজ শেষ। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই প্রথম কার্গো ফ্লাইট চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এই উদ্যোগ এমন সময় এলো, যখন ভারত তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। ভারতের এ নির্দেশনা স্থগিতের চেষ্টা বা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
একই সঙ্গে দেশের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এরই অংশ হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকেও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটেগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়।
তৈরি পোশাক খাতের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি খাতে কোনো সমস্যা হবে না। গত ১৫ মাসে ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য ভারতের বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে। এর ৫০ শতাংশ তৈরি পোশাক। এখন সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে যদি রপ্তানি সহজ করা হয়, তাহলে একই পরিমাণ পণ্য সিলেট দিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় থাকলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে। অনেক ব্যবসায়ী এখনও জানেন না যে, সিলেট থেকে এখনই পণ্য রপ্তানি সম্ভব। আবার অনেকেই বলছেন, কার্গো ফ্লাইট চালু হলেও প্রয়োজনীয় প্যাকেজিং ব্যবস্থার অভাবে রপ্তানির কাজ জটিল হয়ে পড়বে।
সিলেট চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, অনুমোদিত ওয়্যারহাউস থাকলেও আধুনিক প্যাকেজিং সিস্টেম ও ল্যাব না থাকায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা কঠিন হবে। এমসিসিআই সভাপতি আব্দুল জলিল জব্বার বলেন, “প্যাকেজিং ল্যাব ছাড়া শুধু কার্গো টার্মিনাল দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবে না।” এ বিষয়ে বিমানবন্দর পরিচালক হাফিজ আহমদ জানিয়েছেন, প্যাকিং হাউজ সংক্রান্ত উদ্যোগ কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায়, তাদের সক্রিয় হতে হবে।
অনেক রপ্তানিকারকই ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবহার করতেন। কিন্তু ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক খাতের নেতারা বলছেন, ভারতীয় বন্দর ব্যবহার করলে পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম ছিল। এখন দেশের মধ্যেই রপ্তানি প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে দ্বিগুণ ব্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু সিলেট নয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই কার্গো ফ্লাইট চালু করা হবে। দুই বিভাগ থেকেই একাধিক গন্তব্যে পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে, যা দেশের ব্যবসার পরিধিকে বাড়াবে এবং রপ্তানিকারকদের উপর থেকে চাপ কমাবে।