রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) পালিত হতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকী ও ‘জুলাই শহীদ দিবস’। আগামী ১৬ জুলাই দিনব্যাপী এ কর্মসূচি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগত অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৩ জুলাই রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৬ জুলাই সকাল ১০টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান জানিয়েছেন, ‘জুলাই শহীদ দিবস’-এর কর্মসূচি ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত। নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভাগের প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন প্রক্টর অফিস থেকে দ্রুত আইডি কার্ড সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মীদের একযোগে কাজ করতে বলা হয়েছে।
এই দিনে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি থাকবেন তার বাবা মকবুল হোসেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা হলেন– আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীরপ্রতীক ফারুক ই আজম।
অনুষ্ঠানে আরও থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান। এ ছাড়া শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের আরও ২১ জন সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং তাঁরা মঞ্চে থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী।
দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হবে ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শহীদ আবু সাঈদের পৈতৃক গ্রাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রার মাধ্যমে। সকাল সাড়ে ৭টায় কবর জিয়ারত শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে সকাল সোয়া ৯টায় কালো ব্যাজ ধারণ ও শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ১০টায় শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং সোয়া ১০টায় শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ স্থানীয় বিশিষ্টজন ও আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতি ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এবারের আয়োজন স্মরণীয় করে রাখতে নিরাপত্তা, সুশৃঙ্খল আয়োজন ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।