তেহরানে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেও বাংলাদেশি নাগরিক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস। সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীদের নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ থাকলেও দূতাবাসের আশ্বাসে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে প্রবাসী পরিবারগুলোর মনে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসুলার ওয়ালিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তেহরানে বাংলাদেশের ৬৬ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। এরমধ্যে তেহরানে ৫ জন, কারাজে ১ জন, গোরগানে ৮ জন, কোম শহরে ৫০ জন, ইসফাহানে ১ জন এবং মাসাদ শহরে ১ জন অবস্থান করছেন। তাঁরা সবাই ভালো আছেন এবং কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দূতাবাসের সঙ্গে তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়া যাঁরা কর্মরত বা ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের অবস্থাও ভালো বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমানে তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে দূতাবাস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক জানান, “ইরানে প্রায় ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এর মধ্যে তেহরানে আছেন প্রায় ৪০০ জন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’তিনি জানান, ‘আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন, রেডিও তেহরানের কার্যালয় ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগে কমপক্ষে আটজন বাংলাদেশি সাংবাদিক কাজ করেন। হামলার সময় তারা অফিসেই ছিলেন। তবে তারা নিরাপদ ছিলেন “ তিনি আরও জানান, তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে নিজের বাসভবন ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
তবে সরকারি হিসাবে ইরানের বিভিন্ন শহরে মোট ১৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কারও ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ইরান পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পরপরই তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরি হটলাইন চালু করেছে। যেকোনো প্রয়োজনে প্রবাসীরা এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারছেন। ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারও এ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজন হলে প্রবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়া সহজ নয় উল্লেখ করে রুহুল আলম সিদ্দিক বলেন, ‘ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো অত্যন্ত কঠিন। তবে আমরা বিকল্প পথ খুঁজছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থলপথে ইরান থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও নিরাপদ নয়।’
দেশে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে শুরুতে উৎকণ্ঠা থাকলেও দূতাবাসের আশ্বাস এবং প্রবাসী সন্তানদের ভিডিও কল বা বার্তায় জানানো খবরে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজশাহীর শামীমা আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে কোম শহরে পড়াশোনা করে। শুরুতে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে এখন প্রতিদিন ছেলে যোগাযোগ রাখছে, জানাচ্ছে ওরা ভালো আছে। তাই আল্লাহর রহমতে আপাতত চিন্তার কিছু নেই।
ইরানে চলমান উত্তেজনায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে তেহরানের কূটনৈতিক অঞ্চল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। তেহরান শহরের অভ্যন্তরে জনজীবন ও যান চলাচলও মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে তেহরানে অবস্থানরত প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য জরুরি হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য নিরলস চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি হলে কিংবা কারও কোনো বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবশেষ তথ্যে জানা গেছে, তেহরানে বাংলাদেশিরা ভালো আছেন এবং পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করছেন। ‘দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে, কোনো প্রয়োজনে দ্রুত তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের হটলাইনে যোগাযোগ করুন।
ইরানে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক ও বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজন জরুরি পরিস্থিতিতে দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিম্নলিখিত মোবাইল ফোন নম্বরগুলিতে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) সরাসরি যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে-
বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান হটলাইন:
১. +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮
২. +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা হটলাইন:
+৮৮০১৭১২০১২৮৪৭