ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে জনসমক্ষে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। শিয়া মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র দিন আশুরা উপলক্ষে তেহরানে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির হন ৮৬ বছর বয়সী এই ধর্মীয় নেতা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিশাল হলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁড়িয়ে যান অনুসারীরা। ‘দীর্ঘজীবী হোন’, ‘আমাদের ধমনির রক্ত আপনার জন্য’ এমন স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো অনুষ্ঠানস্থল।
খামেনির পাশে তখন ছিলেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাঘ, প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেইন মোহসেনি-এজেই এবং ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ। আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমিও। খামেনি তাঁকে অনুরোধ করেন বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান ‘ও ইরান’ পরিবেশন করতে, যা সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ইরানজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল হঠাৎ ইরানের পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার এবং গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন। এরপর ইরানও পাল্টা হামলায় অংশ নেয়। ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ১২৫টি সামরিক বিমান নিয়ে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ নিয়ে টানা ১২ দিন ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলে। ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই যুদ্ধে ৯ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
সংঘাতের শুরুতেই আয়াতুল্লাহ খামেনি নিরাপত্তাজনিত কারণে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ চলে যান। গুঞ্জন উঠেছিল, তিনি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে অবস্থান করছেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তার রেকর্ড করা বিবৃতি ছাড়া আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ২৬ জুন প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বান সত্ত্বেও ইরান কখনো ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
অবশেষে ১২ দিনের যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর, মহররমের দশম দিন পবিত্র আশুরার আয়োজনে এসে হাজির হলেন খামেনি। তেহরানের ইমাম খোমেইনি মসজিদে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে তাঁর উপস্থিতি ছিল ইরানিদের জন্য ভীষণ আবেগঘন মুহূর্ত। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত খামেনির ভিডিও দেখে ইরানজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। তার অনুসারীরা রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করে।
এই উপস্থিতি প্রমাণ করল, ইসরায়েলের হুমকি আর যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও আয়াতুল্লাহ খামেনি এখনও তাঁর অনুসারীদের কাছে জীবন্ত প্রতীক হয়ে আছেন।