সিরাজগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা; ইনজেকশন শেয়ারিং ও সমকামী সম্পর্ক সংক্রমণের প্রধান কারণ, জেলাজুড়ে সতর্কতা জারি
সিরাজগঞ্জ জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পরিচালিত এইচআইভি কাউন্সিলিং ও টেস্টিং সেন্টারের তাজা তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় ৩৮ জন নতুন শনাক্ত হয়েছেন—গত ছয় বছরের মধ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৫ জন, এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন। গত নভেম্বর থেকে এই অক্টোবর পর্যন্ত ওই সেন্টারে ৩৭১০ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৮ জন সংক্রমিত। ২০২০ সালে সেন্টার চালু হওয়ার পর থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ পরীক্ষা করেছেন, আক্রান্তের সংখ্যা দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
আক্রান্তদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ গ্রুপ হলো ইনজেকশন শেয়ার করে মাদক সেবনকারী—১৮৯ জনের মতো সন্দেহভাজন হিসেবে রেকর্ড পাওয়া গেছে—এছাড়াও সমকামী পুরুষ (MSM) গ্রুপেও সংক্রমণ চোখে পড়ার মতো। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে সিরাজগঞ্জকে এইচআইভি রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সেন্টারের কাউন্সিলর ও প্রশাসনিক দল বলছেন, বিনামূল্যে ওষুধ এবং পরিক্ষা দেওয়া হলেও আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। মাদক সেবন, ইনজেকশন ব্যবহার, যৌন সম্পর্ক সুরক্ষা নেই—এসব কারণ সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার একাধিক কারণ বলছেন তারা।
মানবিক ও সামাজিক কর্মীরা এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন—এক নারী সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, “ভাই-সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার শঙ্কা”। মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, “টেস্ট রুটিন করা হচ্ছে—গর্ভবতী মা, সার্জারি রোগী, জরুরি বিভাগ থেকেও পরীক্ষার জন্য আসে। নেগেটিভ হলে আমরা কাউন্সিলিং দিয়ে জানাই কীভাবে সংক্রমণ থামানো যাবে।” তবে এরই মধ্যে তারা মানছেন—“রিপোর্টেড সংখ্যার বাইরে আরও অনেক আক্রান্ত থাকতে পারে, কারণ অনেকেই পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা সামাজিক উদ্বিগ্নতা ও কলঙ্কের কারণে ক্যোয়ার করছেন না।”
এই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মাদকের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে ১৩ জন, যৌনপল্লী বা রক্ত শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ৮ জন, এবং MSM গ্রুপের মাধ্যমে ১৭ জন—এ যারা সবাই ছাত্র বা যুবক। সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, “এঁরা সাধারণ জনসংখ্যার অংশ, শুধু রিস্ক গ্রুপ নয়। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও এনজিওগুলোকে দ্রুত কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে—পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানো, ইনজেকশন সেবনকারীদের জন্য নিরাপদ বিনিময় পরিষেবা চালু করা, যৌনচেতনা বৃদ্ধিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করা প্রয়োজন। কথা বলছেন আক্রান্তরা—“আমার জ্বর হয়, ব্যথা হয়, তার বাইরে বেশি কিছু বোঝা যায় না।” অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়েও তারা নিজেরাও বুঝতে পারেন না রোগটির প্রকৃতি।







