বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও বামপন্থী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার দুপুর আড়াইটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিরুল ইসলাম জানান, কিডনি ও বার্ধক্যজনিত জটিলতার কারণে গত ৮ আগস্ট থেকে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যতীন সরকার। ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন পাসের পর ভর্তি হন নেত্রকোনা কলেজে। পরে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকোত্তরের পরই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে নাসিরাবাদ কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন।
তার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অবদান ছিল অসামান্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন সক্রিয় অংশীদার। মননশীল রচনার মধ্যে রয়েছে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘সাহিত্য নিয়ে নানাকথা’, ‘সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা’, ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘মুক্তবুদ্ধির চড়াই-উতরাই’ প্রভৃতি।
তার রচনাবলীর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদক এবং ২০১৮ সালে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
আজীবন রাজধানীর কোলাহল থেকে দূরে থাকলেও দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় থেকেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে গেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।
তার মৃত্যুতে সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।