জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও দাঈদের বিরুদ্ধে নতুন করে ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের ইমাম-খতিবদের প্রতি খুতবার মাধ্যমে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আলোচিত এই খুতবাহ এর আহ্বান জানিয়েছেন অনলাইন এক্টিভিস্ট নেহাল মাহমুদ এবং শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তুত করেছেন সাভার জামিয়াতুল আবরার ইসলািময়া মাদ্রসার মুফতি হুমাঈদ সাঈদ কাসেমী। খুতবার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে নিরপরাধ আলেম ও ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে।
একটি চিঠির মাধ্যমে দেশের শ্রদ্ধেয় ইমাম-খতিবদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে গত ১৭ বছরে সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা বিভিন্ন সময়ে সাধারণ নিরপরাধ মুসলিম, দেশবরেণ্য আলেম ও দাঈদের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস প্রক্রিয়ায় দমন-নির্যাতন চালিয়েছে। শুধু ইসলামের সঠিক বাণী প্রচারের কারণে গুম, জোরপূর্বক জবানবন্দি আদায়, দীর্ঘমেয়াদী কারাবাস, ক্রসফায়ার ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হতে হয়েছে অনেককে। এ সময়ে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্যও বড় ধরনের গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় দুই হাজার মানুষের রক্তক্ষয়ীর মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও মাত্র এক বছর পর একই রূপের ‘জঙ্গী নাটক’ সাজানো হয়। এই অবস্থায় শুধু অনলাইন লেখালেখি বা সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। দেশের প্রতিটি মসজিদের খতিবদের দায়িত্ব নিতে হবে টানা কয়েকটি জুমায় এই বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে বুঝাতে হবে যে, একজন মুসলমান হিসেবে দ্বীন পালন কিংবা দ্বীনের পক্ষে সোচ্চার থাকার কারণে কারো কোনো ব্যক্তি বা প্রিয়জনকেও এই ধরনের রাষ্ট্রীয় জুলুমের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
খুতবাহটিতে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে—ইসলামের ইতিহাসে নবী রাসূলদের বিরুদ্ধে অপবাদ, দেশছাড়া ও হত্যার ষড়যন্ত্র কীভাবে হয়েছে এবং আজকের দিনে বাংলাদেশের আলেমদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের মিথ্যা মামলা, গুম, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি, এবং বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখার মতো নির্মমতা কীভাবে বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। অতীতের শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বলা হয়েছে, সত্য বলার কারণে যুগে যুগে আলেমদের এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুতবাহটিতে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে শাপলা চত্বরে গণহত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, মিথ্যা জঙ্গি মামলার ফিরিস্তি এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা সরব ছিলেন, যেমন—আসিফ আদনান, জাকারিয়া মাসুদ ও মাওলানা রেজাউল করীম আবরার—তাদের আবারও নতুন মামলায় জড়ানোর গভীর ষড়যন্ত্র। খুতবাহ অনুযায়ী, এই মানুষগুলো দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দাওয়াতি কাজে সরব ছিলেন, সরকারের বিরুদ্ধে নয় বরং জনগণের অধিকার ও দ্বীন রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন।
শ্রদ্ধেয় ইমাম-খতিবদের উদ্দেশ্যে বিনীত আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, শুধু আগামী কালকের জুমা নয়, পরবর্তী কয়েক জুমায়ও মুফতি হুমাঈদ সাঈদ কাসেমীর শারয়ী সম্পাদিত খুতবার তথ্য ও নুসুসগত সহায়তা নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে এই সত্য কথা বলুন। আপনাদের ভূমিকা জাতির মুক্তির পথে পথপ্রদর্শক। আপোষহীন কণ্ঠে যখন এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরা হবে, তখন দেশের মানুষ নতুনভাবে মুক্তির দিশা খুঁজে পাবে। ভয় পেতে হবে না, কারণ আপনাদের পাশে রয়েছে তাওহীদী জনতা, যারা যেকোনো আঘাত ও প্রতিবাদ রুখে দেবে।
খুতবাহটির পিডিএফ কপি প্রকাশ করা হয়েছে এই লিংকে:
📄 https://drive.google.com/drive/folders/1GGGf4vkY-SZmeCSgPzxw5VBfe7u2rwOr