যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার ১৬ বছরেই মিলবে ভোটাধিকার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
রাজবাড়ীতে ৩১ শিক্ষার্থী পেল এসইডিপি সম্মাননা ঢাবির জহুরুল হক হলে জুতা রাখার র‍্যাক বিতরণ করল প্রশাসন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে গ্রীন ভয়েসের পাঠচক্র “প্রয়াস” অনুষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদের ঢালাই ভেঙে আহত ১২ শ্রমিক, সাটারিংয়ে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ রাজধানী দখলের গোপন পরিকল্পনায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, আওয়ামী নেতাকর্মী গ্রেফতার গাজায় ত্রাণ নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেল ৭১ জনের জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ নিয়ে কাজ করবে: মিলল গোপন প্রমাণ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ – ভূরাজনৈতিক শঙ্কা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার যুগপৎ জাগরণ রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির নির্মম নির্যাতনের তথ্য, ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার ১৬ বছরেই মিলবে ভোটাধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৮ বার দেখা হয়েছে

যুক্তরাজ্যে এবার সাধারণ নির্বাচনে ১৬ এবং ১৭ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভোটাধিকার পাচ্ছেন। দেশটির লেবার পার্টি নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার একে ‘গণতন্ত্রের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার জানিয়েছেন, তরুণরা যখন কাজ করতে পারে, ট্যাক্স দিতে পারে, তখন তারা দেশের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার অধিকারও রাখে। “আমি ১৬ বছর বয়সেই মা হয়েছিলাম। যারা আয় করছে, রাষ্ট্রে অবদান রাখছে—তাদের মতামতও গণনায় আসা উচিত,” বললেন রেইনার।

বর্তমানে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের স্থানীয় নির্বাচন এবং তাদের নিজস্ব পার্লামেন্ট নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সেই ভোট দেওয়া যায়। তবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন, ইংল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সব নির্বাচনে এখনও ১৮ বছর বয়স বাধ্যতামূলক। নতুন আইন কার্যকর হলে সমগ্র যুক্তরাজ্যে সর্বনিম্ন ভোটার বয়স ১৬-তে নেমে আসবে, যা ১৯৬৯ সালে ২১ থেকে ১৮ বছরে নামানোর পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।

এই পরিবর্তনের আওতায় পড়বে প্রায় ১৬ লাখ তরুণ, যারা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে নির্বাচনী ফলাফলে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না, কারণ তরুণদের ভোটার উপস্থিতি ঐতিহাসিকভাবে কম হয়ে থাকে। তবুও রাজনৈতিকভাবে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।

তবে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে রয়েছে সমালোচনার ঝড়ও। বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো মন্ত্রী পল হোমস সংসদে প্রশ্ন তোলেন, “যে সরকার ১৬ বছর বয়সীদের ভোট দিতে অনুমোদন দিচ্ছে, তারা কেন সেই বয়সেই লটারি কেনা, বিয়ে, মদ্যপান বা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না?” তিনি এটিকে ‘একটি বিশৃঙ্খল নীতি’ বলে আখ্যা দেন। এমনকি এটিকেও লেবার পার্টির ‘সংবিধানিক রূপচর্চা ছাড়াই ভোটার ব্যাংক তৈরি করার চেষ্টা’ বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে নাগরিক সমাজ ও বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছেন। ‘ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ’-এর নির্বাহী পরিচালক হ্যারি কুইলটার-পিনার বলেন, “আমাদের গণতন্ত্র সংকটে আছে। অংশগ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে। এই পদক্ষেপ আশা জাগায়।”

নতুন পরিকল্পনায় শুধু বয়সসীমাই নয়, আরও কিছু বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে অটোমেটেড নিবন্ধনের ব্যবস্থা আনার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পাসপোর্ট অফিস, কর বিভাগসহ সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য ভাগাভাগির মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে। এতে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ, যারা বর্তমানে তালিকার বাইরে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়াও, ভোটদানে পরিচয়পত্র দেখানোর নিয়মকে সহজ করতে ব্যাংক কার্ডকেও বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকার ২০২৩ সালে কঠোর ছবি-যুক্ত পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করেছিল, যা প্রায় ৭.৫ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলে অভিযোগ ওঠে।

বিদেশি হস্তক্ষেপ ঠেকাতে রাজনৈতিক দান সংক্রান্ত আইনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি অনুদান দিতে চাইলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালায়। একদিনও ব্যবসা না করা একটি কোম্পানি যেন রাজনৈতিক দান করতে না পারে, সে লক্ষ্যেই এই আইন। কারণ এর আগেও শোনা গেছে, ইলন মাস্কের মতো বিদেশি ধনকুবররা ব্রিটিশ শাখার মাধ্যমে অনুদান দিতে পারেন—এমন আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটা সাধারণ বোধের বিষয়, তবে আরও কঠোরভাবে বিদেশি প্রভাব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

নতুন এই ভোটিং বিল সংসদে পাস করাতে সময় লাগলেও, লেবার পার্টির বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এটি আইনে পরিণত হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। ২০২৯ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ১৬-১৭ বছর বয়সীরাও ভোট দিতে পারবে—এমনটাই সরকারের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT