গত ১১ জুলাই জুমার নামাজের সময় চাঁদপুরের মসজিদে খুৎবা অপছন্দ হওয়ার অজুহাতে একজন ইমামের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আহত ইমাম বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তবে এ ঘটনা ঘিরে দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে— আসলে কারা এমন হামলার পেছনে এবং কেন?
বিশিষ্ট আলেম ও সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং দীর্ঘদিন ধরেই একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের আলেম সমাজকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী—যারা নিজেদের ‘মাজারপন্থী’ বলে দাবি করে। তারা এক সময়ের পতিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অর্থায়নে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই গোষ্ঠীর সুন্নি নামধারী আলেমরা বিশিষ্ট স্কলারদের বিরুদ্ধে এলোপাথারি “কাফের” ফতোয়া জারি করছে। ইসলামের বিশুদ্ধ মতের পক্ষে কথা বলা এবং মনগড়া বিদআত বিরোধী আলেমদেরকে “শাতেম”, “বেদ্বীন” ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে হত্যাযোগ্য করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন দমন-পীড়নের দৃষ্টান্ত নয় বরং স্পষ্টভাবে একটি সন্ত্রাসী আক্রমণের রূপরেখা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে মাজারপন্থী চক্রটি পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাস ও ফতোয়া-ভিত্তিক জঙ্গিবাদের নতুন সংস্করণ চালু করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য— দেশের জনপ্রিয় আলেম সমাজকে স্তব্ধ করে দেওয়া এবং নতুন করে ধর্মীয় অস্থিরতা তৈরি করা।
এক সময় যেসব বিদআত বিরোধী আলেম ছিলেন ইসলামপন্থী জনতার ন্যায্য দাবি আদায়ের মূল কণ্ঠস্বর, তাঁদের আজ পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এই আক্রমণের পেছনে শুধু ধর্মীয় বিভেদ নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিশোধ স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ বিরোধী গণ-অভ্যূত্থানে যেসব আলেম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বিশেষ করে যারা ইসলামি শাসনে বিশ্বাসী তাদের চিহ্নিত করে টার্গেট করা হচ্ছে।
ইমামের ওপর বর্বর হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে কিছু মাজারপন্থী সন্ত্রাসী হামলাকে সমর্থন করে উল্লাস প্রকাশ করছে। তারা ইমামের বক্তব্যকে বিকৃত করে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছে, যা ধর্মীয় সহিংসতাকে উসকে দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত।