
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের (SEARO) বিতর্কিত আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদকে গত শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে’ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করার চার মাস পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। গত ১০ জুলাই ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সায়মা ওয়াজেদকে অংশ নিতে দেখা যায়। তিনি উক্ত সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পরদিনই জরুরি ভিত্তিতে তাকে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি’ প্রদান করা হয়। হেলথ পলিসি ওয়াচ বিষয়টি নিশ্চিত করে।
শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের প্রচারণার সময়কার ঘটনা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, আঞ্চলিক পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সায়মা ওয়াজেদ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি তার একাডেমিক রেকর্ড সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারা (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) এবং ৪৭১ ধারা (জাল নথি তৈরি) লঙ্ঘন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তার পদ নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মানসূচক পদের দাবি করেছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।
এছাড়া সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামক অলাভজনক সংস্থার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে তার ক্ষমতা ও প্রভাব অপব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক এই অভিযোগগুলো ৪২০ ধারা (প্রতারণা ও সম্পত্তি হস্তান্তরে অসৎভাবে প্ররোচিত করা) এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার অধীনে নথিভুক্ত করেছে।
দুদকের এই মামলার কারণে সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশে গ্রেফতারের সম্মুখীন হওয়ায় SEARO অঞ্চলের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ভ্রমণ করতে পারছিলেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস একটি সংক্ষিপ্ত অভ্যন্তরীণ ইমেলের মাধ্যমে কর্মীদের অবহিত করেন যে ওয়াজেদ শুক্রবার থেকে ছুটিতে থাকবেন এবং ডাব্লিউএইচও-এর সহকারী মহাপরিচালক ড. ক্যাথারিনা বোহমে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। উল্লেখ্য, সায়মা ওয়াজেদের প্রভাবশালী মা, বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গত বছরের আগস্টে গণবিক্ষোভের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং তার কন্যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নির্বাচনের টিকিট জেতার জন্য প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠেছিল।