ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫
সম্পদ যাচাইয়ের আওতায় আসা ব্যাংকগুলো হলো— এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল-আরাফাহ্, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবিসি, প্রিমিয়ার এবং ইউসিবি ব্যাংক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে পুনর্গঠন করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের হাতে, যাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউসিবি ব্যাংক থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠরা।
ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনায় ছিল সিকদার গ্রুপ এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক এমপি হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল। এই ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিশেহারা হয়ে পড়ে, ফলে গভর্নর এসব ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা, বিতরণকৃত ঋণ, ঋণগ্রহীতা এবং সম্পদের গুণগত মান যাচাইয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়। তাদের প্রতিবেদনে ঋণখেলাপি, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি ইত্যাদির প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে।
আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং নিরীক্ষা করেছে এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে। কেপিএমজি দায়িত্ব পালন করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে। মালিকানা জটিলতার কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক আপাতত একীভূতকরণের বাইরে রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার জন্য ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে।
গত মে মাসে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির পর জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে একীভূতকরণের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি ব্যাংকের অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে পাঁচটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থার মূল্যায়ন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রতিবেদন ও বাস্তব চিত্রের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আমানতের তুলনায় ঋণের পরিমাণ বেশি এবং ঋণ আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির কারণেই এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।