সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি, আরেক মায়ের অসমাপ্ত যুদ্ধ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
চীনের ভয়ঙ্কর মশা ড্রোন: গুপ্তচরবৃত্তির নতুন অধ্যায় প্রেমিকার টানে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে, লালমনিরহাটে ভারতীয় যুবক আটক গাজার উত্তরাঞ্চল ছাড়ার নির্দেশ ইসরাইলের, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৬ ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া, মুসলিম ঐক্যের আহ্বান শীর্ষ ইরানি ধর্মীয় নেতার আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জাবির এক শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার পুরো সমাজের ব্যর্থতা আর স্বামীর দায়িত্বহীনতা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি, আরেক মায়ের অসমাপ্ত যুদ্ধ বার্সেলোনায় বাংলাদেশিদের ফুটবল ফাইনাল আইরিশ ব্যান্ড নি-ক্যাপের কনসার্টে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান, অস্বস্তিতে যুক্তরাজ্য প্রশাসন

সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি, আরেক মায়ের অসমাপ্ত যুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ১৩ বার দেখা হয়েছে

ভুক্তভোগী নারী রবিবার সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মানসম্মান সব গেছে, সবাই মুক্তি পাক। স্বামী এ ঘটনা শুইনা আমারে ফোনও দেয় না। আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি দশজনের শান্তি চাই, দেশের শান্তি চাই। আমার যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। আমি মামলা তুলে নেব।’ 

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজের ঘরে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ঘুমানোর সময় অভিযুক্ত ফজর আলী দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরে আশপাশের লোকজন এসে ফজর আলীকে মারধর করে। এরপর আরও ৭-৮ জন ঘরে ঢুকে সেই নারীর বিবস্ত্র অবস্থার ভিডিও ধারণ করে।

ফজর আলীর বিরুদ্ধে ঘটনার পরদিনই ধর্ষণ মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরদিন ধর্ষণের মামলা হলে মূল অভিযুক্ত ফজর আলী পালিয়ে যায়। পরে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ঘটনায় সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযোগে রোববার কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভাইরালকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে অনিক।

হাইকোর্ট রোববার শুনানিতে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভিডিও-ছবি অনলাইন থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান, ধর্ষক ফজর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া চারজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। আরও ২০-২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিও রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

এ ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষই অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি করছে। তবে পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পরিচয় নয়, অপরাধই মুখ্য বিষয়।

এদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘মাগুরার ঘটনার মতোই এ মামলারও দ্রুত বিচার হবে।’  রোববার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

রোববার সকালে মুরাদনগরের সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে কয়েকশ লোক ভিড় করেছে। নির্জন বাড়ি হওয়ায় তখন ওই নারীর নিরাপত্তায় মুরাদনগর থানা পুলিশের একটি দল মোতায়েন ছিল। বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।  অন্যদিকে ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ফজর আলীর বাড়ি। তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে কেউ নেই। ঘটনার পর সবাই বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা ভয় পাচ্ছে। ইউপির সাবেক সদস্য আবদুর রব বলেন, ফজর আলী চিহ্নিত মাদক কারবারি। তিনি এলাকায় জুয়ার আসরও বসাতেন। ১৫ বছর ধরে ফজর নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা বলে পরিচয় দিতেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিজেকে বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো কমিটিতে তাঁর পদ নেই।

মানবাধিকার সংগঠন এইড কুমিল্লার রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, ‘নারী নির্যাতনের দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি ছাড়া এ অপরাধ থামবে না।’

রোববার বিকেলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করে আইনি সহায়তার আশ্বাস দেয়।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT