টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ১০ বার দেখা হয়েছে

সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলজ প্রাণী ও পাখিদের বৈচিত্র্যে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, হাউসবোটের শব্দদূষণ ও বর্জ্য দূষণের কারণে এই পরিবেশগত সংকটাপন্ন হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

এ অবস্থায় টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত ২২ জুন রাতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় হাউসবোট প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 

এর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পট ভ্রমণকালে প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের জন্য ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনাগুলো হলো:

✅ প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার
✅ লাইফজ্যাকেট ব্যবহার
✅ স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ
✅ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও বর্জন নিষিদ্ধ
✅ দূর থেকে পাখি ও প্রাণী পর্যবেক্ষণ
✅ উচ্চ শব্দে গান-বাজনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
✅ ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ
✅ ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
✅ মাছ ধরা, শিকার, পাখির ডিম সংগ্রহ ও পাখিদের বিরক্তি নিষিদ্ধ
✅ গাছ কাটা, ডাল ভাঙা ও বনজ সম্পদ সংগ্রহ নিষিদ্ধ
✅ সংরক্ষিত কোর জোনে প্রবেশ নিষিদ্ধ
✅ হাওরের পানিতে প্লাস্টিক বা অজৈব বর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ
✅ মানুষের তৈরি জৈব বর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় টাঙুয়ার  হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। এ হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি কাশমির রেজা বলেন,  “গত ২০ বছরে টাঙ্গুয়ার হাওরের ৭০ ভাগ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। এবার প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট গবেষণার মাধ্যমে এই হাওরের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করা দরকার।”

হাওর এলাকা ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বর্ষায় হাওর যখন ভরে ওঠে, তখন তার সৌন্দর্য সমুদ্রের মতো। ৮৮টি গ্রাম ছোট দ্বীপের মতো ভাসতে থাকে। ১০৯টি বিল এবং ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে আসা ৩৮টি ঝরনা মিলে অপূর্ব এক জলাভূমি এই হাওর।

এদিকে পরিবেশ সচেতন মহল ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,  “টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষা করতে হলে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও সচেতনতা জরুরি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই সম্পদ একদিন হারিয়ে যাবে।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাইনবোর্ড, লিফলেট এবং নৌকায় নির্দেশনাপত্র লাগানো হচ্ছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে জেলার সকল পর্যটন স্পটে এসব নির্দেশনা দৃশ্যমান থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT