মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পারদ যখন চরম সীমায়, তখন এক নজিরবিহীন পদক্ষেপে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি জোর দিয়ে বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সমাধান করতে হবে, যুদ্ধ কোনো পথ হতে পারে না। এই মন্তব্যের মাধ্যমে স্টারমার জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রকাশ্য বিভেদের ঝুঁকি নিলেন।
স্টারমার সাংবাদিকদের বলেন, “ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করি, কিন্তু আমাদের মূল নীতি হওয়া উচিত উত্তেজনা প্রশমন। এখানে সংঘাত বাড়ার সত্যিকারের ঝুঁকি রয়েছে, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গাজার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাবও মারাত্মক হবে।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের পেছনে দেশটির অভ্যন্তরীণ আইনি ও সামরিক জটিলতাও বড় ভূমিকা রাখছে। জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড হারমার এই সংঘাতে ব্রিটেনের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে গুরুতর আইনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ব্রিটিশশাসিত ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে যুক্তরাজ্য-মার্কিন যৌথ বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালানো হলে, তা আইনগতভাবে ব্রিটেনকে যুদ্ধের অংশীদার করে তুলতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার অ্যাটর্নির পরামর্শ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে তিনি বারবার উত্তেজনা কমানোর ওপরই সরকারের মূলনীতি বলে উল্লেখ করেন।
একদিকে যখন আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, ঠিক তখনই পর্দার আড়ালে চলছে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং সেই সঙ্গে সামরিক প্রস্তুতিও। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সংকট নিরসনে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন।
তবে কূটনৈতিক আলোচনার এসব আহ্বানের বিপরীতে, উদ্বেগজনক সামরিক প্রস্তুতির চিত্রও স্পষ্ট। বুধবার রাতে ইংল্যান্ডের আরএএফ লেকেনহিথ বিমান ঘাঁটিতে কয়েক ডজন মার্কিন সামরিক জেটের অবতরণ এই অঞ্চলের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। “অপারেশনাল সিকিউরিটি” বা অভিযানিক নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এই বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবিমান মোতায়েনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যা বড় ধরনের কোনো সামরিক অভিযানেরই ইঙ্গিত বহন করছে।