আয়ারল্যান্ডের এক সেপটিক ট্যাঙ্কে ৭৯৬ শিশুর দেহাবশেষের সন্ধান - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
পর্তুগালে ভয়াবহ দাবানল: সাতজনের মৃত্যু, বহু এলাকা পুড়েছে ULAB এর ওয়ার্কশপে BUPGAC এর গঠনমূলক অংশগ্রহণ আত্রাইয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১১৩ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ব্লগার ফারাবির জামিন মঞ্জুর ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ইউক্রেন যুদ্ধ না থামালে পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা যুদ্ধ বন্ধ না হলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য সাবেক আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি: সেনানিবাসে কীভাবে আশ্রয় নিলেন ৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু – সাগর ও হিমেল রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতায় কাঁপছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যে বিমানে মুসলমান সেজে ‘জঙ্গী’ হবার চেষ্টা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুর!

আয়ারল্যান্ডের এক সেপটিক ট্যাঙ্কে ৭৯৬ শিশুর দেহাবশেষের সন্ধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ৭২ বার দেখা হয়েছে
শিশুদের ওপর বর্বরতার নজির স্থাপন করেছিলো আয়ারল্যান্ডের চার্চ পরিচালিত 'বন সিকোর্স' নামের এক মাতৃসদন, ছবি: বিবিসি
শিশুদের ওপর বর্বরতার নজির স্থাপন করেছিলো আয়ারল্যান্ডের চার্চ পরিচালিত 'বন সিকোর্স' নামের এক মাতৃসদন, ছবি: বিবিসি

আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে লুকিয়ে থাকা এক অন্ধকার ও মর্মান্তিক অধ্যায় উন্মোচিত হতে চলেছে। ক্যাথলিক নানদের দ্বারা পরিচালিত এক কুমারী মাতৃসদনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৮০০ শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধারের এক ভয়ঙ্কর আশঙ্কা সত্যি হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি তুয়াম শহরে সেই পরিত্যক্ত মাতৃসদনের স্থানে খননকাজ শুরু হয়েছে, যা কয়েক দশক ধরে চাপা থাকা এক অমানবিক সত্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে।

‘বন সিকোর্স মাদার অ্যান্ড বেবি হোম’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এখানে অবিবাহিত গর্ভবতী নারীদের আশ্রয় দেওয়া হতো। তবে আশ্রয়ের নামে চলত অমানবিক শোষণ। নারীদের সেখানে এক বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করা হতো এবং সন্তান জন্মের পর তাদের কাছ থেকে নবজাতককে নিষ্ঠুরভাবে আলাদা করে দেওয়া হতো। এই শিশুদের নানরা নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখতেন এবং পরে বিভিন্ন পরিবারে দত্তক পাঠিয়ে দিতেন, যার জন্য মায়ের কোনো সম্মতিই নেওয়া হতো না।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন কর্লেসের দীর্ঘ গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে, এই হোমে মোট ৭৯৮ জন শিশু বিভিন্ন রোগ এবং অপুষ্টিতে মারা গিয়েছিল। মর্মান্তিক বিষয় হলো, তাদের মধ্যে মাত্র দুজনকে কবরস্থানে দাফন করা হয়। বাকি ৭৯৬ জন শিশুর দেহাবশেষ প্রতিষ্ঠানের ভেতরের একটি অব্যবহৃত সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালে কর্লেসের এই গবেষণা প্রকাশ্যে এলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এই নারকীয় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার এক দশক পর অবশেষে ফরেনসিক তদন্ত শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক দেহাবশেষ শনাক্ত করে তাদের মর্যাদার সাথে পুনরায় দাফনের ব্যবস্থা করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগে যাবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়তো সেই হতভাগ্য মায়েদের এবং বেঁচে থাকা স্বজনদের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমবে।

অ্যানেট ম্যাককে নামের এক নারী, যার বোন মেরি মার্গারেট ওই হোমে মাত্র ছয় মাস বয়সে মারা গিয়েছিলেন, তিনি বলেন, “আমার মা-কে একজন নান বলেছিলেন, ‘তোমার পাপের সন্তানটি মারা গেছে’।” এই একটি বাক্যই সেই সময়ের প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতার গভীরতা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।

বন সিকোর্স কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটি ছিল আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলা ক্যাথলিক চার্চের এক বিশাল দমন-পীড়ন ব্যবস্থার অংশ। যেসব নারী বিবাহবহির্ভূত সন্তানের জন্ম দিতেন, তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো ‘ম্যাগডালিন লন্ড্রি’ নামের কুখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানে। এই লন্ড্রিগুলো তথাকথিত ‘পতিতা নারী’, ধর্ষণের শিকার এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত নারীদের জন্য একরকম জেলখানা ছিল, যার শেষটি বন্ধ হয় ১৯৯০-এর দশকে।

দেরিতে হলেও আয়ারল্যান্ড সরকার ২০১৪ সালে এই ঐতিহাসিক অন্যায়ের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চেয়েছে এবং বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে। তবে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে লাভবান হয়েছিল, তারা আজও ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT