ফিলিস্তিনিদের জন্য ইতালি থেকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি জাহাজ গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আটকে দিয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত এই জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী আটক করে আশদাদ বন্দরের দিকে নিয়ে যায়।
এই জাহাজে ছিলেন সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১২ জন মানবাধিকারকর্মী। তারা সবাই গাজার অবরুদ্ধ মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে যাত্রা করেছিলেন। তবে ইসরায়েল তাদের এই মানবিক প্রচেষ্টা থামিয়ে দেয় এবং জাহাজের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানায়, ‘সেলফি ইয়ট’ নামের ওই জাহাজটিকে তারা নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, এই মানবাধিকারকর্মীরা আসলে প্রচারের জন্য এই কাজ করছেন এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরির চেষ্টা করছেন।
জাহাজে থাকা সুইডেনের পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমার নাম গ্রেটা থুনবার্গ। আমি সুইডেন থেকে এসেছি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের আটকানো হয়েছে। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি আমার বন্ধু, পরিবার এবং সহকর্মীদের অনুরোধ করছি, তারা যেন আমাকে এবং আমার সঙ্গীদের মুক্তির জন্য সুইডিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।”
জাহাজটি দখলের আগেই এই ভিডিও বার্তা রেকর্ড করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। কারণ, আগে থেকেই জাহাজে থাকা কর্মীরা জানতেন, ইসরায়েল তাদের আটকে দিতে পারে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। টেলিগ্রামে তারা একটি ছবি পোস্ট করে, যেখানে দেখা যায় মানবাধিকারকর্মীরা জাহাজের ডেকে হাত তুলে বসে আছেন।
এই ত্রাণবাহী জাহাজে ছিল গাজার মানুষের জন্য বিশেষ কিছু জরুরি সামগ্রী। এর মধ্যে ছিল চিকিৎসার সরঞ্জাম, চাল, ময়দা, শিশুদের দুধ (বেবি ফর্মুলা), ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ এবং শিশুদের কৃত্রিম অঙ্গ। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাজার মানুষের জীবন রক্ষায় এগুলো খুব প্রয়োজনীয়।
গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার ভেতরে সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এতে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দেয়। বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গাজার ২৩ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বর্তমানে তীব্র খাদ্যসংকটে রয়েছে। অনাহারে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ম্যাডলিন’ নামের এই জাহাজ যাত্রা শুরু করে ১ জুন, ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে। গাজার প্রথম ও একমাত্র নারী মৎস্যশিকারির নামানুসারে জাহাজটির নামকরণ করা হয়। জাহাজের মানবাধিকারকর্মীরা আশা করেছিলেন, তারা এই ত্রাণ সরাসরি গাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।
কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আগেই জানিয়ে দেয়, তারা এই ত্রাণবাহী জাহাজকে নিজেদের জলসীমায় প্রবেশ করতে দেবে না। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকেই তারা ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটিকে আটক করে। ইসরায়েলের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।
গ্রেটা থুনবার্গসহ জাহাজে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে বিভিন্ন দেশ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গাজা অবরোধ এবং ত্রাণ ঠেকানোর বিরুদ্ধে এই জাহাজের অভিযাত্রা এখন আন্তর্জাতিক মানবিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।