বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা।
প্রতিবছরের মতো এবারও শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে, তবে এবারের আয়োজনের বিশেষ চমক শহিদ আবু সাঈদের ২০ ফুট দীর্ঘ ভাস্কর্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবার শোভাযাত্রায় বড় আকারের চারটি ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করেছে।
যার মধ্যে অন্যতম হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য।
জানা গেছে, ভাস্কর্যটির উচ্চতা হবে ২০ ফুট, যেখানে আবু সাঈদের অকুতোভয় ভঙ্গিতে বুক টান করে দাঁড়ানোর দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হবে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এবারের নববর্ষের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান”।
এ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্বৈরাচারের প্রতীকী ভাস্কর্য, রাজা-রানির মুখোশ, বাঘ, প্যাঁচা, পাখি, ফুলসহ শতাধিক মুখোশ থাকছে বলে জানা গেছে।
তবে শহিদ আবু সাঈদের পরিবার এই ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।
শহিদের পরিবার থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারা চান না যে আবু সাঈদের মৃত্যু কোনো রাজনৈতিক বিভক্তি বা প্রতিক্রিয়ার কারণ হোক।
শহিদের পরিবার বলছে, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ অনুচিত, তাই তারা এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন না।
পরিবার বরং চাইছে, আবু সাঈদের আত্মার শান্তির জন্য জনকল্যাণমূলক কোনো উদ্যোগ নেওয়া হোক, যাতে তার সওয়াব প্রাপ্তি হয়।
বিবৃতিতে শহিদের বাবা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,
“আপনারা যারা আবু সাঈদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে তার ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন, আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের ছেলের জন্য দোয়া করুন এবং তার স্মরণে এমন কিছু করুন যা সত্যিকারের জনকল্যাণে আসবে। আমরা চাই না, আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন হোক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে।
২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেসকো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ সবসময় বিতর্কিত বিষয়। ইসলামী চিন্তাবিদরা এটিকে হারাম হিসেবে দেখেন এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আপত্তি তোলেন।
আবু সাঈদের পরিবারের আপত্তির মধ্য দিয়ে এই বিতর্ক নতুন করে সামনে এলো।
যদিও চারুকলা অনুষদ তাদের শিল্পধারা ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে শহিদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য নির্মাণ করছে, তবে পরিবার তাদের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা তুলে ধরেছে।
এই অবস্থায় বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে, তা এখন দেখার বিষয়।