-ফরিদপুরের ভাটিলক্ষ্মীপুর সার্বজনীন কালীমন্দিরে গতকাল রাতে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সরস্বতী পূজার জন্য নির্মিত প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যা এলাকায় চরম উদ্বেগ ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা মন্দিরে প্রবেশ করে মূর্তি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়। তারা দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, বরং ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য রয়েছে, তা কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান নষ্ট করতে চাইবে না। সচেতন মহলের সন্দেহ, বিশেষ কোনো কুচক্রী মহল হয়তো পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে।
স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশ্বাস দিয়েছে যে, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে এলাকাবাসী এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।
মন্দিরে মূর্তি ভাঙার ঘটনায় আটক যুবকের নাম মো. মিরাজউদ্দীন (৩০)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বাজেদপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ফরিদপুর শহরে ইজিবাইক চালান। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের ভাটিলক্ষ্মীপুর এলাকার কালীমন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য রামচন্দ্র মালো জানান, মন্দিরের সামনে দাঁড়ানো ইজিবাইকের চালক হঠাৎ মন্দিরের বারান্দায় ঢুকে নির্মাণাধীন সরস্বতী প্রতিমা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
মন্দির কমিটি ২৬ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি মন্দিরের সামনে ইজিবাইক রেখে মন্দিরের বারান্দায় ঢোকেন এবং রাস্তার দিকে মুখ করে রাখা প্রতিমা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন, এতে প্রতিমাটি ভেঙে যায়।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সমর মণ্ডল জানান, সরস্বতী পূজার জন্য ছয় হাজার টাকার চুক্তিতে এক মৃৎশিল্পীর মাধ্যমে প্রতিমা নির্মাণ করা হচ্ছিল। এই পূজার জন্য তারা ছাত্রদের নিমন্ত্রণও করেছিল, কিন্তু এই প্রতিমা ভাঙার ফলে তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত হলো।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান জানান, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আটক যুবক পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা জানান, মন্দির কমিটির একজন বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।মন্দিরে মূর্তি ভাঙার ঘটনা -য় মামলা দায়েরের পর আটক যুবককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশে এমন ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। ফরিদপুরের শান্তিপ্রিয় জনগণ চায়, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে এবং সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় আচার পালন করতে পারে।
Leave a Reply