হোয়াইট হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
প্রশ্নটি ছিল, “আমরা জানি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন ডিপ স্টেটের সংশ্লিষ্টতা ছিল, যা সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুনিয়র সোরোসের বৈঠকে আরও পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে আপনি কী বলবেন?”
এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “না, আমাদের ডিপ স্টেটের এখানে কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন…। আমি পড়েছি, (ভারত) শত শত বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “কাজেই বাংলাদেশের বিষয়টি আমি (ভারতের) প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ছেড়ে দেবো।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতের প্রভাবকে আরও সুস্পষ্ট করেছে এবং বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভারতের পরামর্শকেই গুরুত্ব দিচ্ছে, দিল্লির কূটনৈতিক মহল তা-ই মনে করছে।
এ সংক্রান্ত ভিডিও টি দেখতে ভিজিট করুন সাবাশ বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজে https://www.facebook.com/share/v/1EKoBAeXrq/
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটাই প্রথমবারের মতো আমেরিকার শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ভারতের জন্য এমন ইতিবাচক বার্তা এলো। তবে বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠে আসবে কি না, তা নিয়ে আগে সংশয় ছিল, বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘ট্যারিফ যুদ্ধ’-এর কারণে।
বৈঠকের মাত্র এক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসায়, তাদের ওপর একই হারে পাল্টা শুল্ক বসানো হবে। তার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, “ইন্ডিয়া অ্যাট টপ অব দ্য প্যাক”—অর্থাৎ ভারত থাকবে সেই তালিকার শীর্ষে।
এমন পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছিল, মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হবে শুল্কনীতি, আর বাংলাদেশের মতো পার্শ্ববর্তী ইস্যু পিছনে পড়ে যাবে। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে। ভারতের এক শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ভারত যে তাদের প্রতিবেশী হিসেবে ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ’ বাংলাদেশ দেখতে চায়, তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে এবং তিনি এই নীতিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ডিপ স্টেট সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইস্যু যে অমূলক তা উঠে এসেছে বলে মনে করা হয়।
বৈঠকের আগে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ এবং ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। কূটনৈতিক মহলের মতে, এসব বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি বিনিময় এবং দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে উভয় নেতাই একমত প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব আরও স্বীকৃতি দিল এবং বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থার বার্তা পৌঁছে দিল।
Leave a Reply