নোটিশ:
শিরোনামঃ
ইউরোপে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

র‍্যাবের বর্বরতা: শবে কদরের দিন রোজাদারকে ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত আলেপ উদ্দিন

ঢাকা রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৯৭ বার দেখা হয়েছে
আলেপ উদ্দিন
আলেপ উদ্দিন

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নানা অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহকর্মীরা তাকে জল্লাদ বললে সেটা গর্বভরে ফেসবুকে পোস্ট করে আলেপ উদ্দিন।

আলেপ উদ্দিন এর ফেসবুক পোস্ট

নিজেকে জল্লাদ বলে গর্ব করতেন আলেপ উদ্দিন

রোজাদারকে ধর্ষণ ও হত্যা -র ভয়ংকর অভিযোগ

আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ হলো বন্দিদের স্ত্রীদের প্রতি যৌন নির্যাতন। অভিযোগ রয়েছে, র‍্যাবের নির্যাতন কক্ষে তিনি বন্দিদের স্ত্রীদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতেন। এক ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেন, পবিত্র শবে কদরের দিন রোজা ভেঙে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এর আগে তার স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আরও তিনবার তাকে ধর্ষণ করা হয়। শেষবার ধর্ষণের পর ওই নারীর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং কিছুদিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এই ঘটনা নিয়ে আলজাজিরার সাংবাদিক মউদুদ সুজন একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ধর্ষক র‍্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাম আলেপ। স্বামী যখন আলেপকে বারবার ফোন দেন, তখন আলেপ উত্তর দেয়— বন্দি নারী বা পুরুষদের স্ত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ এখানে অলিখিতভাবে স্বীকৃত।’ এই পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার দেখতে পারেন ফেসবুক ভিডিওতে https://www.facebook.com/naima.haider.948/videos/955026736696533/?rdid=2rRjBPTwD9krBlGT#

র‌্যাবে ভয়ংকর ইতিহাস আলেপ উদ্দিন এর

৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ২০১৩ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তাকে র‍্যাব-১১ তে পদায়ন করা হয়। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি র‍্যাবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার, মিডিয়া সেল ও জঙ্গি সেল ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গি দমনের নামে অন্তত ১০০-এর বেশি মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ র‍্যাব-১১-তে থাকাকালীন তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীরের হয়ে জমি দখলের জন্য নিরীহ মানুষকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে একবার তাকে লালমনিরহাট জেলা পুলিশে বদলি করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তিনি আবার র‍্যাবে ফিরে আসেন। র‍্যাবের ইন্টেলিজেন্স শাখায় কাজ করার সময় তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং আলেমদের গায়েবি জঙ্গি মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর কাজে যুক্ত হন। তার এই ভূমিকার জন্য তিনি বিপিএম ও ডাবল পিপিএম (বার) পদক পান।

জঙ্গী নাটক ও আলেমদের নির্যাতন করে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পান আলেপ উদ্দিন

স্বৈরাচারী হাসিনার কাছে থেকে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পায় আলেপ উদ্দিন

আলেপ উদ্দিন এর গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহতা

২০১৭-১৮ সালে আলেপ উদ্দিন ও তার সহযোগী আমজাদ গভীর রাতে বেশ কয়েকজন আলেম ও ইমামকে গুম করেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় ছিল প্রচুর ধর্মপ্রাণ মুসলিম যুবক ও যুবতী।

গুম করার পর অন্তত ১০ দিন থেকে শুরু করে অনেককে বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। পরে তাদের “নব্য জেএমবি” তকমা দিয়ে একাধিক মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানো হতো। অথচ সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাই জানতো যে, এসব ভুক্তভোগীদের ৮০% কোনো জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

প্রায়ই আলেপ ও তার ১০-১২ সদস্যের টিম গভীর রাতে একটি হায়েস গাড়ি নিয়ে আসত এবং মসজিদের কক্ষ কিংবা রাস্তা থেকে তাদের টার্গেট ব্যক্তিকে তুলে নিত।

র‍্যাব-১১ সহ অন্যান্য র‍্যাব কার্যালয়েও ছিল গোপন গুম সেল, যেখানে বিশেষ ব্যক্তিদের ছাড়া কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো না। এসব সেল সাধারণত র‍্যাব ভবনের পেছনের অংশে থাকত। ২ হাত প্রশস্ত ও ৩ হাত দীর্ঘ বাথরুমের মতো কক্ষে মাসের পর মাস নিরীহ আলেম ও সাধারণ মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। অনেক যুবককে দীর্ঘদিন আটকে রেখে ভয়ানক নির্যাতনের পর জঙ্গি নেতা হিসেবে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হতো, বিনিময়ে দেওয়া হতো মুক্তির প্রতিশ্রুতি ও অর্থ।

একজন আলেমকে উলঙ্গ করে উল্টো ঝুলিয়ে তার পায়ুপথে গলানো মোম ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। আলেপ, আমজাদ ও জসিম মিলে এই অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল।

আরেকজন আলেম নির্যাতনের সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে তার স্ত্রীকে তুলে এনে অফিসারদের সামনে নগ্ন করে লজ্জাস্থানে প্লাস দিয়ে মোচড় দেওয়া হয়। মরিচ পোড়া, ডিম থেরাপি, উল্টো ঝুলিয়ে সীমাহীন শাস্তি— এসব তাদের জন্য ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।

এক আলেমকে কয়েক মাস আটকে রাখার পর যখন আদালতে চালান দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি র‍্যাবের তথাকথিত “জঙ্গি তালিকা” দেখতে পান, যা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগে সাজানো ছিল।

বেনজির ও আলেপ

আলেপ ও বেনজির

গ্রেপ্তার ও তদন্ত

বিগত সরকারের হয়ে নানা অপরাধের তথ্য সামনে আসার পর তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনা হয়। পরে সরকারের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। নাগরিক সমাজ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT