যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি শুল্ক বাড়ছে, পাল্টা উদ্যোগে বাংলাদেশ - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
সীমান্তে তীব্র গুলি বিনিময়, পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা চরমে জাককানইবিতে সমুদ্র ও জলবায়ু–বিষয়ক ‘Exploring the Blue Earth’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত দুধকুমার নদে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপ, স্বস্তিতে তীরবর্তী বাসিন্দারা ইবিতে জুলাই বিপ্লববিরোধী অভিযোগে ফের ৯ শিক্ষক বরখাস্ত নানিয়ারচর জোন (১৭ই বেংগল) এর মানবিক উদ্যো‌গে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম নির্বাহী পরিচালক হলেন মো. সাদি উর রহিম জাদিদ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ইবিতে আলোচনা সভা জামায়াতের মনোনয়নে কে এই হিন্দু প্রার্থী ভারত ছাড়তে তড়িঘড়ি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল পশ্চিমবঙ্গে বেওয়ারিশ কুকুরের প্রহরায় বেঁচে গেল পরিত্যক্ত নবজাতক

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি শুল্ক বাড়ছে, পাল্টা উদ্যোগে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১০৬ বার দেখা হয়েছে
Trump_Tariffs_Bangladesh

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পর দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন চাপে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ এখন কৌশল বদলাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিপণ্যে শুল্কছাড়, মার্কিন কোম্পানির জন্য বিশেষ সুবিধা এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাণিজ্যিক খাতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি পাঠানো হবে, যার খসড়া ইতিমধ্যেই প্রণীত হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ থাকবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রযুক্তিনির্ভর কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কছাড় দিতে প্রস্তুত। পাশাপাশি যেসব পণ্যে ইতিমধ্যেই শুল্ক নেই, সেগুলোর ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় থাকবে।

শ্রমবাজারে শঙ্কা

শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শুল্কের বোঝা মূলত তাদের উপর চাপছে। অনেক ক্রেতা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে এই শুল্কভার বহনের দাবি জানাচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং যদি দাম বাড়ানো না যায়, তাহলে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর পরিকল্পনা থেমে যেতে পারে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, “শুল্ক বাড়লে কস্ট আমরা বহন করব, অথচ পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারব না—এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো নিয়ে আমরা বিপাকে পড়ব।”

শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, তৈরি পোশাক খাতে চাপ বাড়লে কিছু কারখানায় নিয়োগ স্থগিত হতে পারে, এমনকি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে হতাশা ও বাস্তবতা

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। এই ধরনের শুল্ক আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”

বাংলাদেশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “আমরা এখনো প্রস্তুত নই। ভারত, ভিয়েতনাম অনেক আগেই তাদের বাজার বৈচিত্র্য করেছে। আমাদের অনেক দেরিতে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।”

কূটনৈতিক কৌশল ও অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ

চলমান পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোই এখন বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার। চিঠির খসড়া অনুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূস হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। সরকারের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি আমরা ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্য মিশনকেও সক্রিয় করছি।”

চিঠিতে উল্লেখ থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের ফরচুন ৫০ কোম্পানির জন্য বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের প্রস্তাব। এর আওতায় ওয়ালমার্ট, টেসলা, শেভরন, মেটা ও বোয়িংয়ের মতো কোম্পানিগুলোর জন্য করছাড়, অবকাঠামোগত সুবিধা ও জমি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি থাকবে।

শুল্কবাধা ও অশুল্কবাধা—দুই দিকেই কাজ চলছে

বিডার সভায় জানানো হয়, শুধু শুল্ক নয়, অশুল্কবাধা দূর করার উদ্যোগও শুরু হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়—মার্কিন সুতা আমদানিতে ফিউমিগেশনের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া, সেসব সুতা গুদামজাত করার অনুমতি দেওয়া এবং কৃষি ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা।

পরিসংখ্যানের ভিন্নতা

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যে গড় শুল্কহার ২.২০ শতাংশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বাংলাদেশ তাদের পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি দুই দেশের আলোচনায় বড় বাধা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বাণিজ্য-সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রোঅ্যাকটিভ কূটনীতি এখন জরুরি।

এ সংক্রান্ত আরো নিউজ পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক নীতির চাপে মার্কিন জনগণ: যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT