ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে বড় ধরনের আর্থিক শৃঙ্খলার উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। সম্প্রতি ক্লাবগুলোর আর্থিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে একসঙ্গে পাঁচটি জনপ্রিয় ক্লাবকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে সংস্থাটি। এই পাঁচ ক্লাব হলো ইংল্যান্ডের চেলসি ও অ্যাস্টন ভিলা, স্পেনের বার্সেলোনা, ইতালির রোমা এবং ফ্রান্সের অলিম্পিক লিওঁ। শুধু জরিমানাই নয়, একই সঙ্গে এই ক্লাবগুলোকে উয়েফার প্রতিযোগিতায় নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়তে হবে।
উয়েফার ক্লাব ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল বডি (সিএফসিবি) জানায়, ক্লাবগুলোর আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নিশ্চিত করে ইউরোপিয়ান ফুটবলে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত আর্থিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের এই কঠিন সিদ্ধান্ত। ২০২৪ সালে উয়েফা নির্ধারিত আর্থিক নিয়মের শর্ত পূরণ না করায় জরিমানা করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানানো হয়।
এই জরিমানার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ইংলিশ ক্লাব চেলসি। ক্লাবটি এবার ক্লাব বিশ্বকাপে পালমেইরাসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ঠিকই, তবে খুশির দিনে তাদের গুনতে হয়েছে রেকর্ড ৩১ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা। যার মধ্যে ২০ মিলিয়ন ইউরো আয় সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের কারণে এবং বাকি ১১ মিলিয়ন ইউরো স্কোয়াড গঠনের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করার অভিযোগে। এটি এক মৌসুমে কোনো ক্লাবকে উয়েফার ইতিহাসের সর্বোচ্চ জরিমানা।
চেলসির দুর্ভোগ এখানেই থামেনি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত না করতে পারলে আরও ৬০ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ ৭১ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হবে।
বার্সেলোনাও বড় আর্থিক সংকটে। স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটি এর আগেও উয়েফার জরিমানার কবলে পড়েছিল। ২০২৩ সালে আয়ের তথ্য গোপনের দায়ে ৫ লাখ ইউরো জরিমানা গুনেছিল কাতালান ক্লাবটি। এবার আরও বড় অঙ্কের জরিমানা, ১৫ মিলিয়ন ইউরো। ক্লাবটির দীর্ঘদিনের আর্থিক দুরবস্থার কারণে এমনিতেই চাপ বেড়েছে। নতুন এই জরিমানায় পরিস্থিতি আরও জটিল হলো।
অন্যদিকে, ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিওঁকেও গুনতে হবে ১.২৫ মিলিয়ন ইউরো। গত কয়েক বছর ধরে লিওঁ আর্থিক সংকটে ভুগছে। লিগ আ থেকে অবনমন এড়ানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ক্লাবটি। ক্লাবের মালিক আমেরিকান ব্যবসায়ী জন টেক্সটর আপিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে সেই আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে উয়েফার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে লিওঁ আগামী মৌসুমে ইউরোপা লিগ থেকেও বাদ পড়তে পারে।
এছাড়া, ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাকে ১১ মিলিয়ন ইউরো এবং ইতালিয়ান ক্লাব রোমাকে ৩ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। সিএফসিবি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, সম্পদ বিক্রি, খেলোয়াড় বিনিময় কিংবা সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে খেলোয়াড় স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্জিত আয় ক্লাবের অফিসিয়াল হিসাব-নথিতে দেখানো যাবে না। যদি এসব আর্থিক অনিয়ম ভবিষ্যতে আবার ঘটে, তাহলে আরও কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
উয়েফার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ক্লাবগুলোকে আগামী দুই থেকে চার বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাবের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে হবে। না পারলে শুধু বড় অঙ্কের জরিমানা নয়, পাশাপাশি ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা থেকেও নিষিদ্ধ হতে পারে।
এই ঘটনার পর ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গনে আলোচনার ঝড় বইছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্লাবগুলোর অপরিকল্পিত ব্যয় এবং আর্থিক অনিয়মের লাগাম টেনে ধরতে উয়েফার এমন পদক্ষেপ সময়োপযোগী। কারণ ফুটবলে দিন দিন বেতন, ট্রান্সফার ফি, স্কোয়াড মেইনটেইনিং খরচ লাগামছাড়া হয়ে পড়ছে। তাই আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বড় ক্লাবগুলোকেও শাস্তির আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।