নোটিশ:
শিরোনামঃ

চীনের সাথে আলোচনায় প্রস্তুত ট্রাম্প….

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১০৭ বার দেখা হয়েছে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের জন্য ৯০ দিনের ট্যারিফ বিরতির ঘোষণা দেন, তখন বৈশ্বিক শেয়ারবাজারগুলো চাঙা হয়ে ওঠে। হোয়াইট হাউস জানায়, আগামী কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এক দেশ ছিল স্পষ্টভাবে এই কূটনৈতিক যোগাযোগ থেকে বাদ – চীন

বাকি বিশ্বের জন্য ট্যারিফে বিরতি থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প নতুন করে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসা সকল চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১৪৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। এর পাল্টা হিসেবে চীনও শুক্রবার আমেরিকান পণ্যের ওপর ১২৫% ট্যারিফ বসায়। সেই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চীন দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং কোনো অন্যায় চাপে ভয় পায় না।”

চীনের পাল্টা ট্যারিফ ঘোষণার আগেই ট্রাম্প প্রশাসন তাদের এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এমনকি চীনকে আবারও জানানো হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চাইলে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সেই আহ্বানে কোনো সাড়া দেয়নি বেইজিং।

হোয়াইট হাউসের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প চাইছেন চীন প্রথমে যোগাযোগ করুক। প্রশাসনের মতে, চীনই বাণিজ্য যুদ্ধ আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, “চীন নিজের উন্নয়নে ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে আত্মনির্ভরশীল থেকেছে। অন্যদের সাহায্যে নয়। এবং আমরা কোনো অন্যায় দমন মেনে নেব না।”

বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এখনও কোনো উচ্চপর্যায়ের ফোনকল চাওয়া হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, চীন প্রস্তুত নয় কারণ শি নিজেকে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করতে চান না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চায়নার সঙ্গে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের বাণিজ্য চুক্তিগুলোতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা চাপ বাড়াতে পারে চীনের ওপর।

যদিও দুই দেশের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছু আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে, কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা কার্যকর হয়নি। চীন চেয়েছে আবারও একটি ‘ব্যাক চ্যানেল’ তৈরি করতে, যেমনটি আগের বাইডেন প্রশাসনে ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’কে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না এবং বিকল্প ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে।

চীনের সাথে যে সব ব্যবসায়ী নেতা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ, তাদের মাধ্যমেও সংযোগ স্থাপন চেয়েছে বেইজিং, যেমন এলন মাস্ক। কিন্তু এসব প্রচেষ্টাও এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।

চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিজ পণ্য না নিয়ে ব্রাজিল থেকে কেনার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া চীন মার্কিন কোম্পানি যেমন অ্যাপল, টেসলা, ক্যাটারপিলার এবং স্টারবাকসের কার্যক্রমে বাঁধা দেওয়ার চিন্তা করেছে, তবে তা বাস্তবায়ন করেনি।

চীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, যেগুলো প্রযুক্তি পণ্যের জন্য অপরিহার্য। যদি তারা সম্পূর্ণভাবে এই রপ্তানি বন্ধ করে বা মার্কিন ট্রেজারি বন্ড বিক্রি শুরু করে, তাহলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুদ্ধে কে জিতবে তা নির্ভর করছে কে কতটা ধৈর্য ধরতে পারে তার ওপর। কেউ কেউ মনে করেন ট্রাম্পের হাতে উপকারি চুক্তি করার ইচ্ছা থাকলেও, শি পেছনে সরে যাবেন না।

হোয়াইট হাউসের সাবেক কর্মকর্তা ম্যাট পোটিংগার এবং লিজা টোবিন বলেছেন, ট্রাম্প-শি দ্বন্দ্ব এখন ‘শূন্য-যোগ প্রতিযোগিতা’। একদিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়াতে, টিকটক পুনর্গঠনে এবং ফেন্টানিল রপ্তানি বন্ধে চুক্তি চান, অন্যদিকে শি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদন এবং তাইওয়ান ইস্যুতে প্রভাব বাড়ানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে অসন্তুষ্ট ছিলেন ট্রাম্প। কারণ চীন তখন সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। এখন আবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প বড় পরিসরে নতুন চুক্তি করতে চান – বাণিজ্য ছাড়াও বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে।

তবে এইবার পরিস্থিতি আরও কঠিন। চীন যেমন আলোচনায় প্রস্তুত, তেমনি শর্তও দিচ্ছে – সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে। আর ট্রাম্প চাইছেন প্রথম পদক্ষেপ চীন থেকেই আসুক।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT