আলাস্কার অ্যানকোরেজ শহরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত বৈঠক গত ১৫ আগস্ট শেষ হয়েছে । উষ্ণ অভ্যর্থনা আর লাল গালিচায় শুরু হওয়া এ বৈঠক ঘিরে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তি হয়নি।
শুক্রবার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পুতিনকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। করমর্দনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর এটাই প্রথমবার পুতিন পশ্চিমা মাটিতে পা রাখলেন। তিন ঘণ্টারও কম সময়ের বৈঠক শেষে দুই নেতা জানালেন কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি।
মঞ্চে উঠে প্রথমে কথা বলেন পুতিন। হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে তিনি জানান, ট্রাম্পকে তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন “প্রিয় প্রতিবেশী” বলে, কারণ আলাস্কা ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার কাছাকাছি। তিনি বলেন, এ বৈঠক অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল এবং এখন একসাথে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো শান্তির পথে সহায়ক হবে। কিয়েভ ও ইউরোপ যেন এই অগ্রগতিকে নষ্ট না করে, সে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠকটি শুরু হওয়ার আগেই রাশিয়ার ভেতরে একে বিজয় হিসেবে প্রচার করা হচ্ছিল। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের বাইরে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন উচ্চপর্যায়ের আলোচনা পুতিনের জন্য কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প বৈঠক শেষে জানান, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, বড় কয়েকটি বাদে। অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। তবে শিগগিরই হতে পারে।” তিনি বলেন, ন্যাটো এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৈঠকের বিস্তারিত জানাবেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জেলেনস্কিকে পরামর্শ দেন যুদ্ধ শেষ করতে সমঝোতায় আসার। তার ভাষায়, “রাশিয়া বড় শক্তি, তাদের সেনারা দুর্দান্ত। একটা চুক্তি করতেই হবে।”
ট্রাম্প আরও জানান, জেলেনস্কি ও পুতিন শিগগিরই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসবেন এবং চাইলে তিনি নিজেও সেই বৈঠকে যোগ দেবেন। অন্যদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ইউক্রেন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, শান্তির জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা অপরিহার্য এবং আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
তবে বৈঠকের সময়ই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতা বাজতে থাকে এবং রাশিয়ার কয়েকটি সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার খবর আসে। ইউক্রেনের বিরোধী নেতা হোনচারেঙ্কো মন্তব্য করেছেন, “পুতিন শুধু সময় কিনলেন, কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি।” ইউরোপীয় মিত্ররাও হতাশ হয়েছেন, কারণ তারা যুদ্ধ থামাতে দৃশ্যমান অগ্রগতির প্রত্যাশা করেছিলেন।
বৈঠকের শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প পুতিনকে বলেন, “খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে।” সঙ্গে সঙ্গে পুতিন উত্তর দেন, “পরেরবার মস্কোতে।” ট্রাম্প হেসে জবাব দেন, “ওই ব্যাপারে সমালোচনা হতে পারে, তবে সেটাও সম্ভব।”