কখনও কী মনে হয়, বাতাসের ভেতর দিয়ে শুধু গন্ধ আর গানই নয়, বিদ্যুৎও ভেসে বেড়াতে পারে?
শব্দের মতো, আলোর মতো… বিদ্যুৎও যদি পাখির মতো উড়ে গিয়ে পৌঁছে যেত কোনও পাহাড়ের গায়ে, মহাকাশযানে, মরুভূমির ভেতর এক সেনা ছাউনিতে — কেমন হতো?
এই প্রশ্নটাই আজ থেকে শতবর্ষ আগে করেছিলেন এক ‘পাগল’ বিজ্ঞানী — নাম তাঁর নিকোলা টেসলা।
তাঁর চোখে ছিল দূরভবিষ্যতের ছবি, কানে হয়তো শোনা যেত এমন এক সময়ের ধ্বনি, যেখানে বিদ্যুৎ চলবে তার ছাড়াই। তখনকার মানুষজন তাঁকে বলেছিল, “স্বপ্নবিলাসী!”
কিন্তু ইতিহাস তো জানে, স্বপ্নবিলাসীরাই একদিন পৃথিবী বদলে দেয়।
এবং সেই বদল এল ২০২৫ সালের মে মাসে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডারপা (DARPA) সম্প্রতি সফল হয়েছে ৮.৬ কিলোমিটার দূরে ৮০০ ওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ প্রেরণ করতে।
ডারপার POWER প্রোগ্রামের আওতায় এই সাফল্য এসেছে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে। শক্তিশালী এক আলোকরশ্মিতে রূপান্তর করা হয়েছে বিদ্যুৎকে, যা ছুটে গেছে শূন্যের বুক চিরে। আর দূরবর্তী প্রান্তে ফটোভোল্টেইক সেলে সেই আলো আবার বিদ্যুতে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই লেজার বিদ্যুৎ দিয়ে কাঁচা ভুট্টাদানা ভেজে বানানো গেছে পপকর্ন!
তবে স্বপ্নের পথে কাঁটা থাকেই।
এই প্রযুক্তি এখনও নবজাতক, যার প্রথম হাঁটাটি বিস্ময়ের হলেও, নিরাপত্তা ও নির্ভুলতার প্রশ্ন রয়ে গেছে।
উচ্চক্ষমতার লেজার যদি ভুল করে চলে যায় অন্য গন্তব্যে, তাহলে ফল হতে পারে ভয়াবহ।
তবু তর্ক নয়, আজ স্বীকৃতি দেয়ার দিন। একশো বছর আগে টেসলা যে বাতাসে বিদ্যুৎ ভাসাতে চেয়েছিলেন, আজ তা বাস্তব।
আজ আমরা জানি, হয়তো একদিন এমন শহর হবে, যেখানে বাড়ির ছাদে থাকবে লেজার রিসিভার, আর শক্তি আসবে দূর আকাশ থেকে—সূর্যের মতো অদৃশ্য কিন্তু নির্ভরযোগ্য।