বাংলাদেশি পর্বতারোহী তৌফিক আহমেদ তমাল পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলু জয় করেছেন। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনি ৮ হাজার ১৬৩ মিটার উচ্চতার শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দেশের গৌরব বাড়ান। অভিযানের আয়োজন করে আল্টিটিউড হান্টার। এর প্রতিষ্ঠাতা ও এডমিন ফজলুর রহমান শামীম গণমাধ্যমকে তমালের শৃঙ্গজয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তৌফিক আহমেদ তমাল। রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার তার হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে শুরু হওয়া এই অভিযান প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলে। দুর্গম পথ, কঠোর ঠাণ্ডা আবহাওয়া, হিমবাহ আর ঝুঁকিপূর্ণ ক্লিফ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত মধ্যরাতে চূড়ায় পৌঁছান তিনি।
গত ১৪ বছর ধরে দেশ-বিদেশে নিয়মিত ট্রেকিং ও উচ্চ পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত আছেন তমাল। ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক ও উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। তার অর্জনের তালিকায় রয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মিটার উচ্চতার সাতটি শৃঙ্গ এবং ৬৫০০ মিটার উচ্চতার দুটি শৃঙ্গ জয়। এছাড়া তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শীতকালীন অভিযানে থার্পু চুল্লি এবং ভাগীরথী-২ জয় করেন। গত বছর জয় করেন বিশ্বের অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ মাউন্ট আমা দাবলাম (৬৮১৪ মিটার)।
মানাসলু শৃঙ্গ নেপালের পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের মনসিরি হিমালে অবস্থিত। ৮১৬৩ মিটার উচ্চতার এই শৃঙ্গকে স্থানীয়রা ‘আত্মার পর্বত’ নামেও চেনে। ১৯৫৬ সালের ৯ মে জাপানি পর্বতারোহী তোশিও ইমানিশি ও শেরপা গ্যালজেন নরবু প্রথমবার এর চূড়ায় ওঠেন। এরপর ১৫ বছর ধরে আর কোনো অভিযাত্রী সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। ১৯৭১ সালে আবারও জাপানি দল শৃঙ্গ জয় করে এবং ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন পর্বতারোহীরা এর চূড়ায় ওঠে। উচ্চতায় অষ্টম হলেও মৃত্যুহারের দিক থেকে মানাসলু বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শৃঙ্গগুলোর একটি। দুর্ঘটনা ও তুষারধসের কারণে এর ‘কিলার মাউন্টেন’ খ্যাতি রয়েছে।
তমালের এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করল।