
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মায়ের হত্যাকারীর দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হলে এ কর্মসূচি হয়। এতে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিহত সুমাইয়ার ভাই সাইফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
সুমাইয়ার সহপাঠী মন্দিরা দাস বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করছি—এর মূল উদ্দেশ্য সবাইকে স্মরণ করানো যে আমরা ভুলি নাই এবং আমাদের সহপাঠীর হত্যাকাণ্ড এখনো গভীরভাবে মনে গেঁথে আছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা পুলিশ ও প্রশাসনকে জানাতে চাই; যেন তারা দ্রুত ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নেয়। আমরা নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়েছি, তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া না পেলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার থেকে আংশিক সহায়তা পাওয়া গেছে। ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, কিন্তু বড় ভাই প্রকাশ্যে আসেননি কিংবা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি—যা আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে। আমরা চাই দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার হোক। বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, তবে সময়মতো জবাবদিহি না হলে আমরা চুপ করে থাকব না।’
একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, ‘এতোদিনেও সুমাইয়াকে কেন হত্যা করা হলো—সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা পাইনি। পুলিশ আশ্বাস দিচ্ছে, তবে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই। পনেরো দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের ধীরগতি আমাদের অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ চাই। কেবল আশ্বাস নয়। তদন্তে উদঘাটিত তথ্য কী—তা প্রকাশ করতে হবে। দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।’
নিহতের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মা ও বোনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার মূল আসামি পূর্বেও অপরাধে জড়িত ছিল এবং ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলো। তাহলে আগে কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি? কেন জামিনে বাইরে ছিলো? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা চাই। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, আসামি একবার বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে আবার ফিরে আসে। সে কোথায় গিয়েছিলো, কী নিয়ে ফিরে এসেছে—তা এখনও পরিষ্কার নয়। এছাড়া ঘটনার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পোস্টমর্টেম ও ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি—যা প্রশ্নবিদ্ধ। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি করছি দ্রুত এসব রিপোর্ট প্রকাশ করে সত্য উদঘাটন করা হোক এবং অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।’

উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা শহরের কালিয়াজুরী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কবিরাজ মোবারক হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, সুমাইয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।