গত শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সুদানের দারফুর অঞ্চলের আল-ফাশের শহরে একটি মসজিদে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। হামলাটি ভোরের প্রার্থনার সময় সংঘটিত হয়। স্থানীয় জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হামলার জন্য আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে দায়ী করা হলেও, গোষ্ঠীটি এখনও নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, হামলার সময় মসজিদটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ আটকা পড়ে থাকতে পারে, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আরএসএফ দারফুর অঞ্চলের আল-ফাশের শহর দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। এই শহরটি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৩ লাখ বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়েছেন। চলতি সপ্তাহে নতুন করে শহরে হামলা শুরু করেছে আরএসএফ। শহরের বাইরে অবস্থিত বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের (এইচআরএল) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, শিবিরটির বড় অংশ এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, সংঘাত ক্রমশ জাতিগত রূপ নিচ্ছে এবং প্রতিপক্ষকে সহযোগিতার অভিযোগে দুপক্ষই সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার নথিতে দেখা গেছে, দখলকৃত এলাকায় অ-আরব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলনীতি চালাচ্ছে আরএসএফ। সম্প্রতি ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, আল-ফাশেরকে অ-আরব জনগোষ্ঠীমুক্ত করার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে গোষ্ঠীটি।
এদিকে, সুদানে চলমান এই সংঘাতের কারণে মানবিক সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩,৩৮৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই দারফুর অঞ্চলে। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
সুদানে চলমান এই সংকটের মধ্যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা যায় এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।