স্পেনের অর্থনীতি ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ২.৫ শতাংশ বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে মাত্র ০.৬, শূন্য এবং ০.৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে স্পেনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৭ শতাংশ, যা প্রত্যাশার তুলনায় বেশি এবং অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে পর্যটন খাত। দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। মহামারির পর ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ থাকায় বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে স্পেন ভরপুর হয়ে উঠেছে। তবে অতিরিক্ত পর্যটক চাপ স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষও তৈরি করছে। পর্যটন ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক খাত এবং নিরীক্ষা পরিষেবার মতো অপর্যটন পরিষেবার রপ্তানি আয় ক্রমে পর্যটনের চেয়েও বড় আকার ধারণ করেছে। এটি স্পেনের অর্থনীতির আধুনিকায়ন এবং খাত বৈচিত্র্যকরণের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শ্রমবাজারে প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি অভিবাসন। ২০২১ সাল থেকে নতুন শ্রমশক্তির প্রায় ৯০ শতাংশ এসেছে অভিবাসীদের মাধ্যমে। লাতিন আমেরিকা ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীরা পরিষেবা খাতকে সম্প্রসারণে সহায়তা করছে এবং একইসঙ্গে শ্রম ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখছে। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিবেশেও পরিষেবার দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, যা অর্থনীতিকে টেকসই বৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
স্পেনের এই অর্থনৈতিক উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেক্সট জেনারেশন ফান্ড থেকেও। দেশটি এই তহবিল থেকে ১৬৩ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ পেয়েছে, যার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সরকার এই অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো এবং অপর্যটন খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে, যা দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় সহায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। কর্মসংস্থান বাড়লেও বেতন ও জীবনযাত্রার খরচের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা এখনো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, রাজনৈতিক বিভাজন কমানো এবং তরুণদের জন্য টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা স্পেনের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অর্থনীতির বর্তমান গতি আশাব্যঞ্জক হলেও এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করলে অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।