
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের রপ্তানি খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এ ঘটনায় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় বারো হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সোমবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, এই দুর্ঘটনার প্রভাবে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, সরকারও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, “শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের হৃৎপিণ্ড। এমন অঘটন আর যেন না ঘটে, সে জন্য সরকারকে দ্রুত ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করে পুনর্গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি নেতারা অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং জোনের মতো সংবেদনশীল স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তারা প্রশ্ন তোলেন— সেখানে কি আধুনিক ফায়ার ডিটেকশন ও প্রোটেকশন সিস্টেম ছিল? বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার টিম কেন তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেনি?
নেতাদের মতে, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স— এই তিন সংস্থার তত্ত্বাবধান থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, ফলমূল, ওষুধের কাঁচামালসহ নানা রপ্তানি পণ্য পুড়ে গেছে। এতে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছেন এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বলে জানায় ইএবি।
সংগঠনটি সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে— ক্ষতিগ্রস্তদের বিমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি, বিমা কাভারবিহীন ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সহায়তা তহবিল, বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আধুনিকায়ন, নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়নের ব্যবস্থা, আধুনিক স্ক্যানার ও প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন, এবং কার্গো ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল রূপান্তরসহ উন্নত ফায়ার প্রোটেকশন ব্যবস্থা।
এছাড়া, ইএবি একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে সরকার, সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকেন।