সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সাহাপুর গ্রামে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও রক্তাক্ত ঘটনা। মাদ্রাসা শিক্ষক গাজী শরিফুল ইসলাম (৩৮) বিকেলবেলা তাঁর শিক্ষার্থীদের নিয়ে যখন মাদরাসা চত্বরে ছিলেন, তখন ঘটে অপ্রত্যাশিত ট্র্যাজেডি। এলাকারই একজন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক রাজু গাজী (৩৬) হঠাৎ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধারালো দা দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছু বোঝার আগেই, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ হারান শিক্ষক শরিফুল।
মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে চিৎকার আর আতঙ্ক। শিক্ষক শরিফুলের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে এসে রাজুকে আটক করে। কিন্তু উত্তেজনা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, জনতার হাতে রাজু গাজী নিজেও গণপিটুনিতে নিহত হন ঘটনাস্থলেই। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত শরিফুল ইসলাম শাহাপুর দাওয়াতুল কুরআনুল হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। তিনি হরিহর গ্রামের প্রয়াত আলেম মাওলানা আলিমুদ্দিন গাজীর ছেলে। রাজু গাজী একই গ্রামের গোলাম মোস্তফা ওরফে খোকন গাজীর ছেলে। জানা গেছে, রাজু দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত এবং কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।
ঘটনার সময় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে রাজুর সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি নিয়ে ছাত্ররা অভিযোগ করলে শিক্ষক শরিফুল ইসলাম তাকে নিষেধ করেন। তখনই রাজু ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফফার নিশ্চিত করেন, রাজু ওই দিন ছাত্রদের উত্যক্ত করছিল এবং শিক্ষক শরিফুল কর্তৃক বাধা দেওয়াতেই এমন নৃশংস হামলা ঘটে।
রাজুর ভগ্নিপতি দিদারুল আলমও স্বীকার করেছেন, রাজু মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। তিনি জানান, তারা এই ঘটনায় মামলা করবেন না, কারণ রাজু নিজেও ঘটনার পর প্রাণ হারিয়েছে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনউদ্দিন জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে তদন্ত চলছে।
এই দুই প্রাণঘাতী ঘটনার পর সাহাপুর গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক আর আতঙ্ক। শিক্ষক শরিফুলের সহকর্মী, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে বাকরুদ্ধ। সব মিলিয়ে এলাকায় এক বিষণ্ণ, থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।