আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
২০ জুলাই বিইউপিতে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান মসজিদ উদ্বোধনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে খতিবের মর্মান্তিক মৃত্যু দক্ষিণ কোরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণে মৃত ৪, নিখোঁজ ২, হাজারো মানুষ গৃহহীন ইসরায়েল ‘সমস্ত বন্দিমুক্তির প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করেছে, দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতির ঘোষণা হামাসের মিঠুনের পা ছোঁয়া, মোদির জড়ানো—দুর্গাপুরে এক অভিনব নাট্যচিত্র ঢাকা শহরের বুকে ‘চাপাতি হাতে ছিনতাই’, নীরব ছিল জনতা ও পুলিশ সোহরাওয়ার্দীতে জামায়াতের মহাসমাবেশে লাখো জনতার ঢল, শৃঙ্খলা-পরিকল্পনায় নজিরবিহীন উদাহরণ ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ‘টর্চ লাইট’ মিছিল, তদন্তের দাবিতে স্লোগানে মুখর ক্যাম্পাস শেকৃবিতে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন’ শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল জাবি ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি তুর্য, সম্পাদক নোমান

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ৮৩ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে নতুন করে সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা বেড়েছে। এসব বিদ্রোহী সংগঠন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তের দিকেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে Bangladesh/Myanmar: The Dangers of a Rohingya Insurgency এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং অন্যান্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন সীমান্তবর্তী এলাকা ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সংগঠিত হচ্ছে। তারা অস্ত্র সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে। এতে শুধু বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্কই বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নয়, একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। অনেক সময় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল এবং গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। এতে সীমান্তের আশপাশের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন হতাহত হন। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও নজরদারি জোরদার করে।

সাম্প্রতিক ভাবে USAID ও WFP-এর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্যাম্পে খাবার, জ্বালানি ও শিক্ষার সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। আইসিজি জানায়, ক্যাম্পের ভেতরে অপরাধী গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত। একদিকে ক্যাম্পে মাদক পাচার, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বাড়ছে, অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা এসব ক্যাম্প থেকে লোকজন সংগ্রহ করে সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

এদিকে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ বলেছেন, মায়ানমারে চলমান সহিংসতা দেশটিকে ‘নিজের ধ্বংসের পথে’ ঠেলে দিচ্ছে— এবং রোহিঙ্গাদের নিয়েও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে

রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ অন্তত তিনটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় স্কুল-মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা, জনসাধারণকে সতর্ক অবস্থায় রাখা এবং সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা-পুলিশ মোতায়েন করেছে। তবে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাটি জানায়, এ ধরনের সশস্ত্র তৎপরতা ও সীমান্ত সংঘর্ষ বন্ধে শুধু কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। বরং বাংলাদেশ এবং মায়ানমারকে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনায় বসতে হবে। পাশাপাশি, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং তাদের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের প্রতিরোধ করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অবহেলা, নাগরিকত্বহীনতা এবং মানবিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী তরুণদের ভুল পথে টেনে নিচ্ছে। তাই শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান না হলে সীমান্ত পরিস্থিতি আরও অশান্ত হতে পারে। এতে বাংলাদেশে বসবাসকারী ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জীবনও হুমকির মুখে পড়বে। সম্প্রতি মায়ানমার মন্ত্রণালয় ১৮০,০০০ রোহিঙ্গাকে “পুনঃনিরাপত্তার যোগ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এটি প্রাথমিক তালিকার অংশ মাত্র।

আইসিজি তাদের প্রতিবেদনের শেষে সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ সরকারকে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পে অপরাধ দমন, সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সীমান্তে বড় ধরনের সংঘাত এবং নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT